বাসস
  ৩০ মে ২০২৩, ১৮:৪২

ধূমপান ও তামাকের ভয়াল নেশা থেকে দূরে থাকুন : প্রধানমন্ত্রী 

ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৩ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা করেছেন, জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অংশীজনদের প্রায়োগিক ভূমিকার মাধ্যমে  ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তিনি বলেন,‘ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যার যেখানে যতটুকু পতিত জমি আছে, তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সকলকে ধূমপান ও তামাকের ভয়াল নেশা থেকে দূরে থাকতে হবে। আমি আশা করি, জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অংশীজনদের প্রায়োগিক ভূমিকার মাধ্যমে আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব, ইনশাল্লাহ।’ প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২৩' উপলক্ষ্যে  আজ দেয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২৩’ পালিত হতে যাচ্ছে জেনে আনন্দিত। তিনি বলেন, দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে ।  
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্ধিত নগরায়ন, শিল্পায়ন ও বসতি গড়ে তোলার কারণে কৃষি জমি উল্লেখযোগ্য হারে  হ্রাস পাচ্ছে, যা খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষত পানির অভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেল, সার ও কীটনাশকের মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে খাদ্যপণ্যের ব্যাপক হারে মূল্য বৃদ্ধি ঘটে। এ অবস্থায় তামাকের মত বহুমাত্রিক ক্ষতিকর ফসলের চাষ কমিয়ে এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী প্রতি ৩০০টি সিগারেট তৈরির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ কাটা পড়েছে। তামাক চাষ ও তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করার জন্য প্রতিবছর গড়ে দুই লাখ হেক্টর বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। তামাক চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক ও তামাকের ক্ষতিকর রাসায়নিক মাটি ও পার্শ্ববর্তী জলাশয়ের পানি দূষণ করছে। ফলে, মাটি, বায়ু ও পানি নির্ভর জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কৃষি ব্যবস্থা ও খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে। অন্যদিকে তামাক প্রক্রিয়া, সিগারেট ও বিড়ির ধোঁয়ায় বায়ুর বিষমাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। 
শেখ হাসিনা বলেন, তামাক ব্যবহার অসংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মহামারি সৃষ্টি করছে। তামাক সেবনের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ যেমন-  হৃদরোগ, ক্যানসার, স্ট্রোক, ডায়াবিটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৮৭ লাখ এবং বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। তামাক সেবন কেবল ধূমপান, জর্দা ও গুলের ব্যবহারকারীদের ক্ষতি করে তা নয়, পরোক্ষ ধূমপানও অধূমপায়ীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাকের ব্যবহার হ্রাস করার লক্ষ্যে ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল’ (এফসিটিসি) প্রণয়ন করেছে। এফসিটিসি’র আলোকে বাংলাদেশে ২০০৫ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ প্রণীত হয় ও ২০১৩ সালে তা সংশোধন করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন,‘  জাতিসংঘ তামাককে উন্নয়নের হুমকি বিবেচনায় নিয়ে এফসিটিসির কার্যকর বাস্তবায়ন ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ (এসডিজি) প্রণয়ন করেছে। এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়টিকে ৭ম ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যুক্ত করেছে। সর্বোপরি, দক্ষিণ এশীয় স্পিকার্স সামিট ২০১৬-এ আমরা আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছি। সে লক্ষ্যে আমাদের সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’  প্রধানমন্ত্রী  ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।