বাসস
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:১৪
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৩৯

গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অধ্যাপক হাসানউজ্জামানের বই ‘ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান : নতুন পথে বাংলাদেশ’

গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অধ্যাপক হাসানউজ্জামানের বই ‘ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান : নতুন পথে বাংলাদেশ’। ছবি: বাসস

ঢাকা, ৩, ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): ছাত্র-জনতার ২৪’র জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়। এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে এদেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। গণঅভ্যুত্থানের নানান ঘটনাপঞ্জী ও এর প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি গবেষণা ভিত্তিক ‘ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান : নতুন পথে বাংলাদেশ’ বই প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান । 

অধ্যাপক হাসানউজ্জামানের লেখা এই বইতে ২৪’র পুরো গণঅভ্যুত্থান, এর প্রেক্ষাপট, পরিণতি ও গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রভাবের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ১৭৬ পৃষ্টার গবেষণা ভিত্তিক এই বই প্রথমা প্রকাশনী থেকে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। 

বইটির নানান দিক নিয়ে সম্প্রতি অধ্যাপক হাসানউজ্জামান বাসসের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বইটিতে গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি, দেশে গণতন্ত্রের সংকট, ছাত্র আন্দোলনের কারণ, কৌশল, নেতৃত্বের কৌশল, ছাত্রসমাজ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা এবং অংশগ্রহণ উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। 

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দ্রুত সময়ের মধ্যে এমন একটি বই রচনার করতে আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে কী? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান বলেন, ‘২০২৪’র গণঅভ্যুত্থান নিঃসন্দেহে আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ। ঐতিহাসিক ঘটনাবলী প্রথমে নথিভুক্ত এবং বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এই উপলব্ধি থেকে আমি বইটি প্রকাশের অনুপ্রেরণা পাই। 

অধ্যাপক হাসানউজ্জামান বলেন, ‘বইটি লেখার সময় তাত্ত্বিক কাঠামোর সাথে বিশ্লেষণ এবং বর্ণনামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। রচনার ক্ষেত্রে প্রাথমিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। অভ্যুত্থানে সক্রিয় যারা ছিলেন তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি।’  

গবেষণা ভিত্তিক এই বই রচনার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গবেষকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সরাসরি তথ্য খুঁজে বের করা। নিখুঁত তথ্য খুঁজে বের করা একটি চ্যালেঞ্জ। সৌভাগ্যবশত, আমি বইটি রচনার জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি।’

বইয়ে কোন কোন দিক প্রাধান্য পেয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বইয়ে আমি গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি, দেশে গণতন্ত্র চর্চার সংকট, আন্দোলনের কারণ ও প্রকৃতি, নেতৃত্ব, কৌশল, ছাত্রসমাজ, রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন সংগঠন যেমন পুলিশ, মিডিয়া, সেনাবাহিনী ইত্যাদির ভূমিকা দেখানোর চেষ্টা করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বইটিতে আমি গণঅভ্যুত্থানের বহুমাত্রিক প্রভাব এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশে যাতে আর কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা না হয় সেজন্য সকল দল, গোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে সহযোগীতামূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন। একই সাথে একটি ন্যায্য ও সমতা ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে গণআকাঙ্খা সেই অনুসারে এই বইতে বিভিন্ন কমিশনের প্রতিবেদন উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। 

বইয়ের সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গবেষণা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমার এই গবেষণার মাধ্যমে সামগ্রিক প্রক্রিয়া, কারণ ও এর প্রভাব বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যেকটি ঘটনা বিশ্লেষণ করা যায়। 

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ভবিষ্যতে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অনেক গবেষণা হবে। অভ্যুত্থানের অনেক ঘটনাই এই বইতে অনুপস্থিত। বইটি ভবিষ্যত গবেষকদের জন্য একটি পথনির্দেশক হয়ে থাকবে। 

লেখক অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে (বিএ) সম্মান শেষ করেন। ১৯৭৯ সালে একই বিভাগ থেকে তিনি এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।