বাসস
  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৩৬

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখতে দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : মেজর (অব.) হাফিজ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় যোগ দেন। ছবি : বাসস

ঢাকা, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির যেকোনো অপচেষ্টা রুখতে দেশপ্রেমিক সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়েছেন। 

তিনি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহবান জানান।

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে বসে ‘দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে’ অভিযোগ করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। অর্থাৎ এ দেশকে ধবংস করতে যেটুকু বাকী আছে তা পূর্ণ করতে নয়া আঙ্গিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে চায় শেখ হাসিনা।’

বিএনপির এই নেতা বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই। বিশেষ করে চব্বিশের জুলাই-আগস্ট’র অভ্যুত্থানে যে ছাত্র সমাজ অংশ গ্রহণ করেছে, তাদেরকে সাথে নিয়ে ও হাসিনা বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে রেখে আমরা ত্রিপক্ষীয় ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে চাই।’

রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে সেটি এখনো চলমান, সেটি এখনো শেষ হয় নাই। এটি কারা করেছে, সে তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ঘটনায়  সরকারের ভূমিকা কী ছিলো? সে তথ্যও আমাদের জানা নেই। তাই এ ব্যাপারে এখনই আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

তিনি বলেন, ‘অল্প কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। আশা করছি আজকের মধ্যে সব কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে! কারা এজন্য দায়ী? এসব প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেলে এ সম্পর্কে বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জনগনের সামনে প্রতিক্রিয়া তুলে ধরবো। অপূর্ণ তথ্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, গণতন্ত্রকে ধবংস করার জন্য এসব করা হচ্ছে। আগামী দিনে গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমন সব ঘটনা ঘটিয়ে কেউ-কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারেন। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ আছে কিনা তাও জানার চেষ্টা করবো।’

এ সময় তিনি জানান, ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ছয় মাস পূর্তির দিনে গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পরপরই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে এই ভাঙচুর শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে বাড়ি ভাঙার কাজ  চলছিল।

‘আওয়ামী লীগের কাছে দেশের স্বার্থ বড় নয়’- উল্লেখ করে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘একাত্তর সালে অনেক যুদ্ধের পর আমরা আমাদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। কিন্ত স্বাধীনতার পর পরই আমাদের স্বপ্ন ভঙ্গে হলো। যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলোম সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার-এ সব বিষয় ধীরে ধীরে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্থাপিত হলো একটি একদলীয় রাষ্ট্র। যেখানে সংবাদ পত্র থাকবে না, রাজনৈতিক দল থাকবে না সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে না..এমন একটি রাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এদেশে ১৯৭৫ সালে কায়েম হয়েছিলো। এরই নাম হলো আওয়ামী লীগ। এদের কাছে দেশ নয়-নিজের দল, নিজের পরিবার, নিজের স্বার্থ, নিজের সম্পদ আহরণই মূল কাজ।’

তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের কত সম্পত্তি জানি না। আমরা মিডিয়াতে মাঝে মধ্যে খবর দেখি, আগে তো জানতাম না যে, শেখ পরিবারেরই ৮টি বাগান বাড়ি রয়েছে গাজীপুর এলাকাতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন যেখানে ৪‘শ কোটি টাকার মালিক হয়েছে এবং হেলিকপ্টারে ঘুরে বেড়ায়- এটা অকল্পনীয়। কি ধরনের গণতন্ত্র তারা প্রতিষ্ঠা করেছে মানুষ তা জানে।’

বিএনপি’র শীর্ষ স্থানীয় এই নেতা বলেন, ‘আমরা আশা করবো, এখন অতি দ্রুত এদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। কারণ, গণতন্ত্র না থাকার ফলেই নানা ধরনের ঘটনা ঘটে। এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য অনেক আত্মত্যাগ করেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘এখন নির্বাচন দিলে বিএনপি বিজয়ী হবে। এই ধারনা থেকে একটি মহল নির্বাচন দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে। বিএনপি যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এটা তো অপরাধ হতে পারে না। বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার জন্য কেনো নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা হবে- এটি আমরা বুঝতে অক্ষম।’

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনি দ্রুত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিন। নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের প্রধান অনুসঙ্গ। তাই নির্বাচনকে ঠুনকো অজুহাতের কারণে আর দূরে ঠেলে দেবেন না।’

স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সহ-সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ বাবলুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দলের যুগ্ম-মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, তাঁতী দলের মনিরুজ্জামান মুনির, মৎস্যজীবী দলের ইসমাইল হোসেন সিরাজী, স্বাধীনতা ফোরামের সহসভাপতি হাফিজুর রহমান, একেএম রেজাউল করীম প্রমূখ।