পুরান ঢাকার লালকুঠি : আবারো ফিরে পাচ্ছে প্রাচীন জৌলুস

বাসস
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:২৮ আপডেট: : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৪৩
পুরান ঢাকার লালকুঠি। ছবি : বাসস

|| মাহামুদুর রহমান নাজিদ ||

ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : বুড়িগঙ্গার তীরে দাঁড়িয়ে থাকা পুরান ঢাকার লালকুঠি, যেটি মূলত নর্থব্রুক হল নামে পরিচিত, আজও ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। ১৮৭৪ সালে ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল জর্জ ব্যারিং নর্থব্রুকের ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে এই টাউন হলটির নির্মাণ শুরু হয়। ১৮৮০ সালে জর্জ ব্যরিং নর্থব্রুক এ ভবন উদ্বোধন করেন। তার নাম অনুসারেই এর নাম রাখা হয় ‘নর্থব্রুক হল’। যদিও এর লাল রঙের কারণে স্থানীয়দের মুখে-মুখে এটি পরিচিত হয়ে ওঠে ‘লালকুঠি’ নামে।

ভবনটি নির্মাণে নেতৃত্ব দেন ঢাকার স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। এর স্থাপত্যে ব্রিটিশ, মুঘল ও ইউরোপীয় শিল্পশৈলীর মিশ্রণ দেখা যায়। মূল ভবনের অংশে ছিল নাট্যশালা, সভাকক্ষ, মিলনায়তন ও গ্রন্থাগার। এক সময় এটি হয়ে উঠেছিল ঢাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। এখানেই ১৯২৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনা দেয় ঢাকা পৌরসভা যা ভবনটির ইতিহাসে গর্বের অধ্যায় হয়ে আছে।

বহু বছর ধরে অবহেলার কারণে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১৬ সাল থেকে এটি আর মিলনায়তন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বর্তমানে ভবনটির পুনঃসংস্কার ও সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটিতে চলছে সংস্কার কাজ। নতুন রঙের প্রলেপে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে দেড়শো বছরের পুরোনো লালকুঠির সৌন্দর্য। ভবনের সম্মুখে তৈরি করা হয়েছে মার্বেল পাথরের বৃহৎ ফোয়ারা। সংস্কারকাজে মূল কাঠামো, কাঠের দরজা-জানালা ও কারুকাজ পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে আদি নকশা অনুসরণ করে।

লালকুঠির সংস্কারে স্থানীয়দের মধ্যেও নতুন করে আগ্রহ তৈরি করেছে। পাতলাখান লেনের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু সাইদ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে এখানে আসতাম। নাটক, কবিতা আবৃত্তি, ঈদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। ভবনের সিঁড়িতে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতাম বন্ধুদের সঙ্গে। এটি শুধু একটি দালান নয়, ছিল আমাদের জীবনের অংশ। সংস্কারের ফলে সেই স্মৃতিগুলো আবার জীবন্ত হয়ে উঠছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদুর রহমান জানান, ‘এক সময় লালকুঠিতে সেমিনার, আলোচনা সভা ও কমিউনিটি গ্যাদারিং হতো। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এটি অব্যবহৃত ছিল বলে আগ্রহ হারিয়ে যায়। সংস্কার শেষে আমরা আশা করছি, এই ভবন আবার আগের জৌলুস ফিরে পাবে।’ 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) ও প্রকল্প পরিচালক রাজীব খাদেম বার্তা সংস্থা বাসসকে জানান, ‘সংস্কার কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ। কিছু স্থানীয় সমস্যা থাকলেও আমরা বাসিন্দাদের সঙ্গে বসে বাকি কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিচ্ছি। যেহেতু এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, তাই প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের মাধ্যমেই সংবেদনশীল কাজগুলো করানো হচ্ছে। এখানকার শ্রমিকরা সাধারণত দেশের ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলোর সংস্কারকাজ করেন। ভবনটি ঠিক ১০০ বছর আগে যে রূপে ছিল, সেই রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। আগামী দুই মাসের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আওয়ামী লীগ শাসনামলে নিয়োগ পাওয়া দুদকের ১৩৫ আইন কর্মকর্তা এখনো বহাল: মামলা পরিচালনায় ধীরগতি 
মার্কিন শুল্কের খেলনা শিল্পে চরম অনিশ্চয়তা
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে ইসলামীর আপিলের শুনানি চলছে
ফিলিপাইনের আকাশে আগ্নেয়গিরির ছাই
ইসরাইলি-মার্কিন জিম্মি মুক্তি পেলেও যুদ্ধবিরতি নয় : ইসরাইল
দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা
জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা
‘অপারেশন সিন্দুর’ শেষ হয়নি, আপতত স্থগিত : মোদির হুঁশিয়ারি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রের 
ভারত নিউক্লিয়ার ব্লাকমেইলে ভীত নয় : মোদি
১০