।। কাশেম মাহমুদ ।।
ঢাকা, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এস আলম গ্রুপের নেয়া প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা অনাদায়ি ঋণ আদায়ে একটি সুগার ফ্যাক্টরি, পুকুর, কৃষি জমিসহ প্রায় ২০ একর বন্ধক রাখা জমি নিলামে তোলা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জানান, বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও এস আলম গ্রুপের কোন সাড়া না পাওয়ায় ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দু’দিন আগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ভবন, বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহীদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ১৪ মে দুপুর দুই ঘটিকার মধ্যে ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় রক্ষিত টেন্ডার বক্সে দরপত্র জমা দিতে হবে এবং ওইদিন বিকেল ৩ টায় দরপত্রদাতাদের উপস্থিতিতে টেন্ডার বাক্স খোলা হবে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর মৌজায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন প্রায় ১১ একর জমি, ফ্যাক্টরি ভবন ও গুদামঘর নিলামে তুলে ব্যাংকের প্রায় ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকার ঋণ এবং আদায়কালতক ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য খরচাদি আদায়ের নিমিত্তে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ১২(৩) ধারা মোতাবেক এই দরপত্র আহ্বান করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংকটি।
গত রোববার (২০ এপ্রিল) সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের জামানতকৃত সম্পত্তি বিক্রির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নামে মূল ঋণ, সুদ ও অন্যান্য চার্জ মিলিয়ে মোট ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এই ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে ঋণ আদালত আইন, ২০০৩-এর ১২(৩) ধারার অধীনে সম্পত্তিগুলো নিলামে তোলা হয়েছে। নিলামে তোলা সম্পত্তিগুলো তিনটি নিবন্ধিত বন্ধক দলিলের মাধ্যমে জামানত রাখা হয়েছিল। সুগার ফ্যাক্টরি, পুকুর, কৃষি জমিসহ প্রায় ২০ একর সম্পত্তি ২০১৩ সালের ২৮ ও ২৯ মে রেজিস্টার্ড দলিল নম্বর ৮০৫৭, ২০১৩ সালের ১৪ ও ১৫ জুলাই রেজিস্টার্ড দলিল নম্বর ৩৩২৭ এবং ২০১৪ সালের ১৩ ও ১৬ মার্চ রেজিস্টার্ড দলিল নম্বর ৩৭৪৬ এর মাধ্যমে ব্যাংকে মর্টগেজ রাখা হয়েছিল। যা বিক্রি করে অপরিশোধিত ঋণ আদায়ের চেষ্টা করছে ব্যাংক। তবে দরপত্র খোলা হলে বুঝা যাবে প্রকৃত অর্থে কত টাকা আদায় হতে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে একটি সূত্র জানিয়েছে, এস আলম গ্রুপ যে ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, এসব সম্পদ বিক্রি করে তার এক তৃতীয়াংশও আদায় হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। কারণ ঋণ গ্রহণের সময় এস আলম গ্রুপ সবসময় প্রভাব খাটিয়ে জমির মূল্য বাজার দরের চেয়ে অত্যধিক বেশী দেখিয়ে ঋণ গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের ওপর প্রভাব বিস্তার করে বিপুল অঙ্কের ঋণ উত্তোলন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদক ইতোমধ্যে তাদের বিভিন্ন সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তর ও ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধের উপর আদালতের নির্দেশনা নিয়েছে। এছাড়া গ্রুপটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগও উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়ে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের প্রভাব মুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মওলাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ঋণ পুনরুদ্ধারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় জামানতকৃত সম্পত্তি নিলামে তোলা হচ্ছে এবং ব্যাংকটির অর্থ উদ্ধারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।