সান্ত্বনার আত্মনির্ভরতার পথ ধরে স্বাবলম্বী হচ্ছেন লালমনিরহাটের নারীরা

বাসস
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১৬:৩২
সান্ত্বনার আত্মনির্ভরতার পথ ধরে স্বাবলম্বী হচ্ছেন লালমনিরহাটের নারীরা। ছবি: বাসস

লালমনিরহাট, ১৯ মে ২০২৫ (বাসস): শূন্য হাতেই জীবনযুদ্ধে নেমেছিলেন সান্ত্বনা রানী রায় (৪৫)। আজ তিনি লালমনিরহাটের বড়বাড়ী বাজারের অন্যতম জনপ্রিয় দর্জি প্রতিষ্ঠান ‘এস বি টেইলার্স’-এর সফল উদ্যোক্তা। তার অনন্য পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সাহসিকতা তাকে শুধু স্বাবলম্বীই করেনি, বদলে দিয়েছে শতাধিক নারীর জীবন। 

বড়বাড়ী ইউনিয়নের রুদ্ররাম গ্রামের বাসিন্দা সান্ত্বনা রানীর জীবন শুরু হয় সংকট ও অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে। ১৯৯২ সালে বিয়ে হয় স্থানীয় ডাক অফিসের দিনমজুর বিধুভূষণ রায়ের সঙ্গে। স্বামীর সামান্য আয়ে সংসারে চলত টানাটানিতে। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা সান্ত্বনা রানী হাল না ছেড়ে আত্মনির্ভরতার পথ খোঁজেন। 

প্রথমে রংপুর দিনাজপুর রিহ্যাবিলেটেশন সার্ভিস (আরডিআরএস) থেকে দর্জি প্রশিক্ষণ নিয়ে সেলাই শিখে নিজেকে দক্ষ করে তোলেন। এরপর নিজেই প্রশিক্ষক হয়ে প্রায় ৩০০ নারীকে দিয়েছেন পোশাক তৈরি শেখার সুযোগ, যাদের অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। তিনি নিজেও কয়েক বছর প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।

এরপরই নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখেন। স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ২০০০ সালে বড়বাড়ী মহিলা মার্কেটে ‘এস বি টেইলার্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুটা ছিল কষ্টের, তবে অল্প সময়েই সুনাম ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বর্তমানে খরচ বাদ দিয়ে তার বার্ষিক আয় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি জমি কিনেছেন, গৃহপালিত পশু পালন করছেন এবং মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছেন এই আয় থেকেই।

সান্ত্বনা রানী বলেন, ২০ বছরে আমার দোকানে কাজ শিখে বহু মেয়ে আজ স্বাবলম্বী। এখনো ৩ থেকে ৫ জন স্থানীয় নারী এখানে পার্টটাইম কাজ করেন।

তার বড় মেয়ে আশা লতা রায় মৌ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে বিজয়া রায় সৃষ্টি লালমনিরহাট মজিদা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। সান্ত্বনার স্বপ্ন মেয়েদের একজনকে সরকারি কর্মকর্তা ও অন্যজনকে নার্স হিসেবে গড়ে তোলা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারি সহায়তা পেলে দোকানের পাশের খালি জায়গায় বড় পরিসরে দর্জির কাজ শুরু করে আরও নারীদের কর্মসংস্থান করতে চাই।

দোকানের নিয়মিত গ্রাহক মোকলেজা আক্তার ও আকলিমা আক্তার বলেন, ছোটবেলা থেকেই এখানে পোশাক বানাই। ফ্যাশন ও মানে এ এলাকায় ‘এস বি টেইলার্স’-এর জুড়ি নেই।

বড়বাড়ী বাজার বণিক সমিতির সাবেক সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম তপু বলেন, সান্ত্বনা একজন পরিশ্রমী ও সৎ ব্যবসায়ী। তার উদ্যোগ এলাকার নারীদের পোশাকে নতুনত্ব এনেছে।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান বলেন, সান্ত্বনার সফলতা অনুকরণীয়। ঋণের জন্য আবেদন করলে সহায়তার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে।

জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, সরকার নারী উদ্যোক্তাদের পাশে আছে। সান্ত্বনা রানীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

তরুণদের উদ্দেশে সান্ত্বনা রানীর পরামর্শ, চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে সেলাই শেখে টেইলার্স ব্যবসা শুরু করলে অল্প পুঁজিতে ভালো আয় সম্ভব। একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ৪০-৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেও মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা আয় করা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ব্রিটেন-ইইউর মধ্যে ১২ বছরের মৎস্যশিকার চুক্তি
শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর : শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা
অসুস্থ ও অসমর্থ ক্রীড়াসেবীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে ‘অবাঞ্ছিত সংস্থা’ ঘোষণা রাশিয়ার
রুয়ান্ডার সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করে দিল ফ্রান্স
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ইউএনএফপিএ এর মধ্যে যুগান্তকারী অংশীদারিত্বের সূচনা
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস' চালু করবে বিআরটিসি
৩৫তম জাতীয় পুরুষ হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা কাল শুরু
নতুন কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও কানে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন কেভিন স্পেসি
রুশ ব্যালে কিংবদন্তি ইউরি গ্রিগরোভিচ প্রয়াত
১০