ভোলায় চিকিৎসার অভাবে মরছে গবাদি পশু, জনবল সংকটে প্রাণী সম্পদ দপ্তর

বাসস
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১৫:৪১
ছবি : বাসস

প্রতিবেদক: আল-আমিন শাহরিয়ার

ভোলা, ২৬ জুন, ২০২৫ (বাসস): উপকূলীয় জেলা ভোলার ৭ উপজেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগে অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে গবাদি পশুর চিকিৎসা সেবা। কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক খামারি ও পশু পালনকারীরা। পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় ঔষধও। এতে মারা যাচ্ছে গবাদি পশু। 

লোকবলের অভাবে কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে জেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরগুলো। অচলাবস্থা নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দফায় দফায় চিঠি দিয়েও কোনো ফল মিলছে না ।

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাত উপজেলায় ১০৯টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত ৪২ জন। শূন্যপদ রয়েছে ৬৭টি। এর মধ্যে জেলা কার্যালয়ে ১১ পদের বিপরীতে ৩, জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে সাত পদের বিপরীতে ২, ভোলা হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারে পাঁচ পদের জায়গায় একজন কর্মরত আছেন। অন্যদিকে জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে ৯ পদের সবগুলোই শূন্য হয়ে আছে।

এছাড়া জেলা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে ৫, দৌলতখানে ৭, বোরহানউদ্দিনে ৫, তজুমদ্দিনে ৮, লালমোহনে ৫ চরফ্যাশনে ৩ ও মনপুরা উপজেলায় ৫টি পদ শূন্য আছে। যেখানে প্রতি উপজেলায় ১১ জন করে কর্মরত থাকার কথা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গৃহপালিত বহু অসুস্থ গরু, ছাগল, ভেড়াসহ গবাদি পশু নিয়ে আসেন প্রান্তিক খামারিরা। দেখা গেছে, অফিসের একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী এসব রুগ্ণ পশুর চিকিৎসা দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহিন মাহমুদকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

জানা গেছে, কর্মচারীরা অসুস্থ গবাদি পশু পরীক্ষা করেন, আর তার কথা শুনেই প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা প্রেসক্রিপশন লিখে দেন।

ভুক্তভোগী খামারি, আব্দুল হাই, আলাউদ্দিন ও আমেনা বেগম জানান, প্রেসক্রিপশনের ঔষধগুলো ওই অফিস থেকে দেয়া হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে অসুস্থ পশুর ঔষধ তাদের বাহিরে থেকেই কিনতে হচ্ছে।

তারা জানান, সঠিক রোগ নির্ণয় করতে না পারায় ভুল চিকিৎসার অভাবে এ পর্যন্ত তাদের বহু গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে। লোকসান হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, প্রাণী সম্পদ দপ্তরের এসে পশুর ডাক্তার পাওয়া যায় না। লোকজন নেই, ওষুধ নেই। প্রতিদিন সকালে সুবিধাভোগীরা গরু-ছাগল নিয়ে সেখানে এলেও ওই পশুদের চিকিৎসাসেবা দেন অফিসের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা গেছে, কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, পশুপাখিকে টিকাদান, চিকিৎসাদান, মাঠ পরিদর্শন, খামারিদের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তি বিতরণ, পশুপাখির সুস্থতার সনদ দেয়া,উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ, খামার নিবন্ধন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি সেবাদানের কাজগুলো এই দপ্তরের অধীনে পরিচালিত হয়। কিন্তু জনবলসংকট থাকায় বাকিদেরই সব দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে পশু পালনকারীরা চাহিদামতো সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

সেখানকার কর্মরতরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে অনেক পদ খালি। ফলে কার্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গাড়িচালক না থাকায় কর্মকর্তারা যেতে পারছেন না মাঠপর্যায়ে। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক পশু পালনকারীরা।

সেবা কার্যক্রমের এমন বেহালদশা নিয়ে কথা হয়, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাসসকে জানান, এ দপ্তরের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে জনবল নিয়োগ খুবই জরুরি।  তার তথ্যানুযায়ী, শূন্যপদে পদায়ন না হওয়ায় প্রাণিসম্পদ সংশ্লিষ্ট অন্য যাঁরা আছেন, তাঁদের সহযোগিতায় আপাতত কোনোরকম সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, জেলায় বর্তমানে ১০৯টি পদের বিপরীতে ৬৭টি পদ শূন্য। যেসব পদে লোকবল নেই,সেসব পদে লোকবল দেয়া হলে আমাদের সার্বিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিএনপি এবং জামায়াতের সাথে আমাদের দূরত্ব হওয়ার কথাটি সত্য নয় : হাসনাত আবদুল্লাহ
নির্মাণাধীন ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটের কাজ ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্নের নির্দেশ
তানজানিয়ায় নির্বাচন ঘিরে বিক্ষোভে ‘প্রায় ৭০০ জন নিহত’: বিরোধী দল
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সি চিনপিংয়ের প্রথম বৈঠক
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক ‘বিশ্বাস’ গড়ে তোলা উচিত : চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী
সাতক্ষীরা সীমান্তে ভারতীয় বিভিন্ন মালামাল জব্দ 
সিলেটে বিদেশি রিভলভার ও বিস্ফোরক উদ্ধার
ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকায় সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ শুরু 
মিরসরাইয়ে যাত্রীবেশে ১৯শ' পিস ইয়াবা পাচারকালে দুইযাত্রী গ্রেফতার
রাজধানীতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার
১০