ঢাকা, ১৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘গণতন্ত্র নস্যাৎ করতে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলছে।’

নরসিংদীর পাঁচদোনায় মোমেন খান চত্বরে ‘জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গনঅভ্যুত্থানের সকল শহীদের স্মরণে’ আলোচনা ও সমাবেশে তিনি আজ এ কথা বলেন। পলাশ উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনসমূহ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

দেশের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন অপশক্তি বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কাজেই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য একটি দুষ্ট চক্র বিভিন্নভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার প্রচেষ্টায় রয়েছে।’

মঈন খান বলেন, আমাদের সংগ্রাম কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করা হচ্ছে সংগ্রামের প্রথম ধাপ। সেটা সম্পন্ন করেছি। কিন্তু আমরা এখনও একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে পুনর্গঠিত করতে পারিনি। সামনে আরও চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেই চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।

২৪’র বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটি ছিল একটি মেধাভিত্তিক আন্দোলন। দেশে মেধা প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজপথে নেমেছিল ছাত্ররা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে সেই মেধা আন্দোলন সরকার পতনের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়েছিল। ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বড় একটি অংশই ছিল বিএনপির নেতাকর্মী।

এ দেশে গণতন্ত্র ফিরে আনার জন্য আন্দোলন হয়েছে জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের ভোটাররা তাদের ভোট দিয়ে সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচিত করব। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না।

উদাহরণ টেনে আব্দুল মঈন খান বলেন, ১৯৯৬ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে  প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরের পরবর্তীতে একদলীয় শাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছেন এ দেশের মানুষকে। কাজেই বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশের জনগণের রক্তে রয়েছে প্রতিবাদ। এ দেশের  মানুষ একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন,  বাংলাদেশের মানুষকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বপ্রকার সহায়তা দেবে বিএনপি। সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে- অত্যাবশকীয় সংস্কারগুলো করে যতদ্রুত সম্ভব দেশের মানুষের হাতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া। 

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্ম নরসিংদীতে এ কথা উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২৪ জুলাই ছাত্র জনতা আন্দোলনে এই জেলার সংযুক্ত ছিল। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা। নরসিংদী সন্তান হিসেবে বলতে চাই, এই জেলার মানুষ মুক্তির গৌরবের আন্দোলনে জ্বলন্ত সাক্ষী শুধু নয়, মুক্তির আন্দোলনের নায়ক।

আলোচনা সভায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ তাহমিদ, ইমন, আমজাত হোসেন, আশিকুল ইসলাম রাব্বি, মো. হাছান নিয়া, কাজী আব্দুর রহমান, আরমান মোল্লার পরিবার এবং আহত অলিউল্লাহ, মো. তানভীর মোল্লা, আসিফ মাহমুদ ভূইয়ার হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেন মঈন খান। 

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পলাশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম।