।।এনামুল হক এনা।।
পটুয়াখালী, ১১ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে এবার মৌসুমি সবজির ব্যাপক ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে সবজি চাষ করে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে অনেক সবজি চাষির পরিবারে। শুধু তাই নয়, উৎপাদনের পাশাপাশি এবার সবজির বাজার ভালো থাকায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
জেলার চরাঞ্চলসহ বাউফল, গলাচিপা, দশমিনা, দুমকী, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া ও রাঙাবালি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়েছে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে শীতকালীন সবজিসহ বারোমাসি হাইব্রিড বেগুন, ঢেঁড়স, পুঁইশাক, পটল, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচকলা, পেঁপে, লাউ, টমেটো, গাজরসহ অন্যান্য শাকসবজি।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, পটুয়াখালী সদর উপজেলায় এ বছর ১৮০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে । আর উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন।
বাউফলের ২৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। গলাচিপায় ৩৮০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ৬ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন। কলাপাড়ায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ৬ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। দশমিনায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ২ হাজার ৯৭০ মেট্রিক টন।
জেলার মির্জাগঞ্জে ১৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। দুমকিতে ৭৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ১ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন এবং রাঙাবালিতে ১২০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ২১৬ মেট্রিক টন। এছাড়া পৃথকভাবে ১০৭ হেক্টর জমিতে শুধু কাঁচকলা আবাদ হয়েছে। কাঁচকলা ও অন্যান্য সবজি মিলিয়ে মোট উৎপাদন হয়েছে ৩০ হাজার ৬০ মেট্রিক টন।
বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের পাতারপোল গ্রামের আদর্শ কৃষক মহিউদ্দিন আহমেদ (৩০) বাসসকে জানান, তার বাড়ির আঙ্গিনায় ৫০ শতক জমিতে তিনি সবজি আবাদ করেছেন। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে চাল ও মিষ্টি কুমড়া, পুঁইশাক, কাঁচকলা, পেঁপে, ঝিঙা ও বেগুন। এতে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
তিনি জানান, তার বাড়ির আঙিনা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। তার এই সবজি বাগান থেকে আরো ২ থেকে ৩ মাস সবজি বিক্রি করা যাবে। সবজি আবাদে সাফল্য ও সচ্ছলতা ফিরে আসায় মহিউদ্দিনের পরিবারে ফুটেছে হাসি। তার সন্তানরাও লেখাপড়া করছে সবজি বিক্রির টাকায়।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে শীতকালীন ও বারোমাসি হাইব্রিড এসব সবজি চাষ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন বাড়ির আঙিনায় ও জমিতে সবজির আবাদ করছেন। কৃষক ও কৃষাণীরা এসব সবজি বাগানের পরিচর্যা করছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিষ্টি কুমড়া আকার ভেদে ছোট সাইজ ৫০-৮০ টাকা, মিডিয়াম সাইজ ৮০-১২০ টাকা আর বড় সাইজ ১৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলা হালি ৩০-৪০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য সবজি বিক্রিতেও ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। এসব সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় হাট-বাজার থেকে কিনে নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে।
বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বাসসকে বলেন, বাউফলে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম চাষ হয়েছে। মূলত: বন্যা ও বৃষ্টির কারণে এবার একটু কম সবজি চাষ হয়েছে। তবে বাজার ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফিরেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহাদাত হোসাইন বাসসকে বলেন, এ বছর জেলায় ১ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষ হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে ৩০ হাজার ৬০ মেট্রিক টন। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন সবজির বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ অব্যাহত থাকবে।