ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস) : পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এন্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) রেজাউল করিম বলেছেন, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, সাইবার অপরাধ ও মাদক নিয়ন্ত্রণে মিডিয়া এবং পুলিশের মধ্যে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, দেশের জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ জন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের মেলবন্ধন থাকা জরুরি।
আজ বৃহস্পতিবার এটিইউ প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রেজাউল করিম বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে সাংবাদিকরা অনেক সত্য উদ্ঘাটন করেন, যা আমাদের মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা কাজে লাগিয়ে অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। এতে জনগণ সুফল পায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী দেশ। এখানে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষ সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে। সংস্কৃতি, উৎসব ও ধর্মীয় সম্প্রীতি আমাদের বড় সম্পদ। দেশকে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদমুক্ত রাখতে এ ধরনের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
এটিইউ প্রধান আরও বলেন, অতীতে যারা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত ছিলেন, তাদের অনেকে অল্প শিক্ষিত ছিলেন এবং তারা জঙ্গিবাদকে মুক্তির পথ বলে মনে করতেন।
সভায় ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সেই সময় অভিযুক্তদের অধিকাংশই নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির কারণে উগ্র মতাদর্শে জড়িয়ে পড়েন।
সভায় রেজাউল করিম বলেন, ‘ইনফর্ম এটিইউ’ নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ গোপনীয়ভাবে তথ্য দিতে পারেন। মিডিয়া সদস্যদের এই তথ্যপ্রবাহে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো তথ্য যদি সরাসরি দিতে চান, তবে নির্ভরযোগ্য কারও মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবেও আমাদের জানানো যেতে পারে। আমরা শতভাগ গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেব।
এক প্রশ্নের জবাবে এটিইউর এই কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে দেশে জঙ্গিবাদের তৎপরতা নেই বললেই চলে। তবে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়, বিশেষ করে সাইবার অপরাধ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কেউ যেন উগ্রপন্থায় প্রভাবিত না হন, সে বিষয়ে সজাগ থাকা জরুরি।
পলাতক আসামিদের কতজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পট পরিবর্তনের পরে কিছু মামলায় অভিযুক্তদের পালিয়ে যাওয়ার তথ্য এসেছে। তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশ আসামি কারাগারে রয়েছেন, কিছু আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব বিষয় আমরা পর্যালোচনা করছি এবং সারা দেশের জঙ্গিবাদ-সংশ্লিষ্ট মামলা ও ঘটনাগুলো নিয়ে গবেষণা করছি।
সাম্প্রতিক সময়ে মাজারে হামলার ঘটনাগুলোর বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে এটিইউ জানায়, ৫ আগস্ট পরবর্তী সিলেট অঞ্চলে বিশেষ নজরদারি এবং সমাজের সব পক্ষের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অশ্লীলতা ও অপরাধ দমনে সম্মিলিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।
জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে অতীতে কোনো ধরনের অনিয়ম বা মিথ্যা মামলা হয়েছে কি না— এই প্রশ্নে এটিইউ প্রধান বলেন, সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলার জায়গায় আমরা অবিচল থাকব। কেউ অপরাধ করে থাকলে, সে যেই হোক, ছাড় পাবে না।
এটিইউ প্রধান আরও বলেন, আমরা এখন শুধুমাত্র জঙ্গিবাদ নয়, বরং সাইবার অপরাধ, প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ এবং ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ নিয়েও কাজ করছি। ভবিষ্যতে এর কর্মপরিধি আরও বিস্তৃত হবে বলে আমরা আশাবাদী।
মতবিনিময় সভায় এন্টি টেররিজম ইউনিটের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।