ঢাকা, ১২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশের সরকারি নীতিমালায় কার্বন নিঃসরণ হ্রাস (ডিকার্বনাইজেশন) ও জলবায়ু সহনশীলতাকে সমন্বিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি বলেছেন, সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জলবায়ু কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় এক উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে জলবায়ু ও জ্বালানি সংক্রান্ত ‘টিম ইউরোপ ইনিশিয়েটিভে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মিলার একথা বলেন। এ উদ্যোগে জ্বালানি খাতে জলবায়ু প্রশমন ও জলবায়ু অভিযোজন বিষয়ে মনোনিবেশ করা হয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এর সদস্য দেশসমূহ, ইউরোপীয় অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড সম্মিলিতভাবে ‘টিম ইউরোপ’ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৫২৫ বিলিয়ন টাকা) সহায়তা প্রদান করছে।
এই সহায়তা জ্বালানি খাতের আধুনিকায়ন—জ্বালানি দক্ষতা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, গ্রিড উন্নয়ন এবং জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজন—জলবায়ু সহনশীল জীবিকা ও পানি ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করা হবে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্যারিস চুক্তির প্রতি অটল রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ইউরোপীয় সবুজ চুক্তির মাধ্যমে ইইউ ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্য কার্বন অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে এসে পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ও কার্বন নিঃসরণমুক্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে সুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি ন্যায়সঙ্গত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র এবং ক্রয় ও বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে আরও স্বচ্ছতা আনতে হবে, যাতে ইইউভুক্ত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিক যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা করতে পারে।
রাষ্ট্রদূত মিলার এই সপ্তাহে চালু হওয়া ইইউ গ্লোবাল গেটওয়ে হাবের কথাও উল্লেখ করেন। এটি বৈশ্বিকভাবে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রকল্পে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশে ইইউর গ্লোবাল গ্রিন বন্ড ইনিশিয়েটিভ দ্রুত চালুর গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, গ্রিন বন্ড হচ্ছে টেকসই ও জলবায়ু-সম্পর্কিত বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি তহবিল সংগ্রহের অন্যতম কার্যকর উপায়। এটি বিদেশি ও দেশীয় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে, অর্থায়নের উৎস বৈচিত্র্য আনে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ও প্যারিস চুক্তির প্রতি সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
টিম ইউরোপ ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে পরিচালনা করছে জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লট্জ, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত জোরিস ভ্যান বোমেল এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে-শারলে।
এ ছাড়া ইউরোপীয় কমিশনের আন্তর্জাতিক বিষয়কসংক্রান্ত ও জলবায়ু অর্থায়নবিষয়ক পরিচালক ডায়ানা আকোন্সিয়া অনলাইনে অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং বাংলাদেশ-ইইউর জলবায়ু ও জ্বালানি সহযোগিতার মূল দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলন নিয়েও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বন্যা ব্যবস্থাপনা, লবণাক্ততা মোকাবিলা ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে সম্পৃক্ত ইউরোপীয় ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতের উদ্ভাবন, অর্থায়ন ও অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।