
আবু নাঈম
পঞ্চগড়, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো চত্বরে দ্বিতীয় বারের মতো আয়োজন করা হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। নাম দেয়া হয়েছে অপরূপা পঞ্চগড় সিজন-২। মহানন্দার বুকে যখন জলের বাড়া কমার খেলা চলছে ঠিক তখনি পাড়ে জমেছে রূপের আসর। এই রূপ হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ের।
বন্যপ্রাণীদের আলোকচিত্রী তরুণ ফিরোজ আল সাবাহ বছরের পর বছর পঞ্চগড়ের পথ ঘাট ঘুরে যে ছবি ক্যামেরাবন্দী করেছেন তাই স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে।
গত ২৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ২৮টি ছবিতে ফুটে উঠেছে পঞ্চগড়ের নদী, লোকজীবন, কৃষি, জীবিকা আর অপরূপ প্রকৃতি। স্থান পেয়েছে পঞ্চগড়ের খোলা আকাশে দৃশ্যমান কাঞ্চনজঙ্ঘা। বাদ যায়নি বন্যপ্রাণীরাও।
হালকা শীতের এই সময় তেঁতুলিয়ায় পর্যটক সমাগম বেড়েছে। বেরসিক আকাশের কারণে যাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ হয় না তাদের কাছে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। সেইসঙ্গে এক টুকরো জমিতে পুরো পঞ্চগড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ হারাতে চান না প্রকৃতিপ্রেমীরা। প্রতিটি ছবিতে রয়েছে এক একটি গল্প আর দুর্দান্ত সব দৃশ্য।
এর মধ্যে কোনো কোনো ছবি তুলতে ৭ থেকে ৮ বছরও অপেক্ষা করতে হয়েছে বলে দাবি তরুণ এই আলোকচিত্রীর। হিমালয় কন্যার লুকায়িত সৌন্দর্য তুলে ধরতে এমন আয়োজন সমৃদ্ধ করবে জেলার পর্যটনশিল্পকে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
পর্যটক নাদিয়া মাহাছানুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে যখন কাছে এসে দেখলাম আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। প্রতিটি ছবির মধ্যে ফটোগ্রাফারের যত্ন ও পরিশ্রম স্পষ্ট। এই ছবিগুলো দেখে পঞ্চগড়ের সৌন্দর্য সম্পর্কে আমার ধারণাটাই পাল্টে গেছে। সত্যিই অসাধারণ সব ছবি।
পর্যটক প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য পঞ্চগড়ে এসেছি। আকাশ মেঘলা থাকায় সেই সুযোগ আমাদের হয় নি। কিন্তু কাঞ্চনজঘার যে ছবি এখানে প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে তা দেখে কাঞ্চনজঘা ও পঞ্চগড় দেখার আগ্রহ আরও বেড়ে যাচ্ছে।
পর্যটক সেলিনা জেসমিন বলেন, আমি নেপালে গিয়েও কাঞ্চনজঘার এতো সুন্দর ছবি দেখতে পাইনি। কাঞ্চনজঘা ও মাছরাঙার ছবিটি আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে।
ঢাকা থেকে আসা শাহ আলম বলেন, এই ছবিগুলো এমন নয় যে শুধু দেখলাম আর ক্লিক করলাম। প্রতিটি ছবির আলাদা আলাদ গল্প রয়েছে। এখানে ছোট্ট একটি জায়গায় পুরো পঞ্চগড়ের সৌন্দর্য একসাথে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় তরুণ স্বেচ্ছাসেবী আরিফ হোসেন বলেন, এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে পঞ্চগড়ের পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমরা চাই যারা এভাবে প্রান্তিক এ জেলার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন তাদের সরকারিভাবে যেন পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়।
বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ বলেন, আমার নেশা ও পেশা ফটোগ্রাফি। ফটোগ্রাফারের ভাষা হচ্ছে ছবি। আর ছবির কাজ হচ্ছে মানুষকে দেখানো। পঞ্চগড়ের লুকায়িত নৈসর্গিক সৌন্দর্য তুলে ধরার জন্যই এই আয়োজন। পঞ্চগড় থেকে হিমালয়ের ৩০ টির মতো বরফের চূড়া দেখা যায়। এর বাইরেও পঞ্চগড়ের যে আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে, গ্রামীণ লোক বৈচিত্র, জীববৈচিত্র আছে সেই বিষয়গুলোকে আর্টফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। প্রথম বারের মতো এবারও দারুন সাড়া পাচ্ছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, পঞ্চগড়কে সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য এবং এখানকার পর্যটন উন্নয়নে আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ তার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছেন। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা তার সাফল্য কামনা করি। উপজেলা প্রশাসন তার সঙ্গে রয়েছে।