বাসস
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:৫৪

১৯৯৬ সালের স্মৃতির স্বপ্নে বিভোর শ্রীলংকার উঠতি তারকারা

কলম্বো, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (বাসস/এএফপি):  শ্রীলংকা যখন ১৯৯৬ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ  জয় করে পুরো বিশ^কে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তখন দুনিথ ওয়েলালাগে ও মাথিশা পাথিরানার জন্মও হয়নি। কিন্তু এই উঠতি তারকাদের উপর ভর করেই এবার ভারতের মাটিতে আবারো সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে মুখিয়ে আছে লংকানরা। 
ফাস্ট বোলার পাথিরানা ও অল-রাউন্ড ওয়েললাগে উভয়েরই বয়স ২০ বছর। আগামী ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ক্রিকেটের বিশ^মঞ্চে শৈশবের অনেক স্বপ্নের নায়কদের সাথেই খেলার সুযোগ হচ্ছে এই তরুণদের। 
বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে আত্মবিশ^াসী পাথিরানা বলেছেন, ‘আমরা আবারো শ্রীলংকায় বিশ^কাপ ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখছি। শ্রীংলকার হয়ে যত বেশী ম্যাচ জেতা যায় সেই চেষ্টাই করবো। এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতই।’
চলতি মাসেই মাত্র ৫০ রানে গুটিয়ে গিয়ে ভারতের কাছে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাজেভাবে হারের দু:সহ স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি শ্রীলংকা। কিন্তু ওয়েলালাগে জানিয়েছেন যে ধরনের প্রস্তুতি তারা বিশ^কাপের জন্য নিয়েছেন তাতে শ্রীলংকা ভাল কিছু করে দেখাবে বলে তিনি আত্মবিশ^াসী। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সারা বিশে^ খেলার মত অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আমাদের দলে রয়েছে। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ পরিকল্পনা সাজাতে চাই। আমি মনে করি নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে যেকোন দলের পক্ষেই জয় সম্ভব।’ 
ভারতের বিপক্ষে গত ১২ সেপ্টেম্বর কলম্বোতে এশিয়া কাপে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের  সেরা পারফরমেন্স দেখিয়েছেন ওয়েলালাগে। ৪০ রানে তিনি ৫ উইকেট সংগ্রহ করেছিলেন। যদিও ম্যাচটিতে ভারত ৪১ রানে জয়ী হয়। ওয়েলালাগে বলেছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি যে খেলোয়াড়কে সম্মান করি, তিনি বিরাট কোহলি। তার উইকেট পাওয়াটা আমার জন্য ছিল দারুন আনন্দের । তার উইটেক পাবার পর আমি বিশ^াস করতে পারছিলাম না।’
ওয়েলালাগে আরো বলেছেন দলের সকলেই যদি তার নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারে তবে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের পরিস্থিতি যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তবে ব্যাটিংটা সহজ হয়ে যায়। আমি যখন মিডল অর্ডারে খেলতে নামি তখন সবসময়ই সহজ পরিকল্পনায় স্থির থাকি। তখন ঐ প্রান্তে যদি সিনিয়র খেলোয়াড় থাকেন তবে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। নাহলে আমি নিজেই যতটা সম্ভব স্ট্রাইকে যাবার চেষ্টা করি, ঝুঁকিপূর্ণ শটগুলো কম খেলার চেষ্টা করি, উল্টো বোলারের উপর  চাপ ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করি।’
গত বছর অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ^কাপে শ্রীলংকার অধিনায়ক ছিলেন ওয়েলালাগা। ঐ আসরে তিনি ব্যাট হাতে  একটি সেঞ্চুরি করা ছাড়াও বল হাতে নিয়েছিলেন ১৭টি উইকেট। 
অতি দ্রুত বিশ^ ক্রিকেটে নিজেদের উত্থানের পিছনে পরিবারকে কৃতিত্ব দিয়েছে উভয় খেলোয়াড়ই। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ওয়েলালাগের হাতে প্রথম ব্যাট তুলে দিয়েছিলেন তার মা। স্কুলে পড়ার সময় তার বাবাও  একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার ছিলেন। অন্যদিকে পাথিরানার বাবা একজন একনিষ্ঠ ক্রিকেট ভক্ত। তার অনুপ্রেরণায় পাথিরানা ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত হয়েছেন। 
সাবেক তারকা ফাস্ট বোলার লাসিথ মালিঙ্গার বোলিং এ্যাকশনের সাথে একেবারেই বোলিং স্টাইল মিলে যাওয়ায় পাথিরানাকে ‘বেবি মালিঙ্গা’ হিসেবে ডাকা হয়। ছোটবেলায় বেসবল খেলতে গিয়ে তিনি সুইংয়ের বিষয়টি রপ্ত করেছেন। এ সম্পর্কে পাথিরানা বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি কখনো স্বাভাবিক এ্যাকশনে বোলিং করিনি।’
ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগে চেন্নাই সুপার কিংসে খেলতে গিয়ে অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনির নজড়ে পড়েন পাথিরানা। ধোনির কাছ থেকে তিনি অনেক কিছুই শিখতে পেরেছেন। পাথিরানা বলেন, আমার বয়স অনেক কম ছিল, কেউই আমাকে চিনতো না। কিন্তু এই দলে ট্রেনিংয়ের সুযোগ পেয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এখন আমি জানি  টি-টোয়েন্টিতে  কিভাবে পারফর্ম করতে হয় । চার ওভারের মধ্যে কিভাবে ভারসাম্য রাখতে হয় সেটা আমি শিখেছি। ধোনি  আমাকে এ সম্পর্কে বুঝিয়েছেন। ইনজুরির থেকে নিজেকে রক্ষা করার বিষয়টিও আমি এখানে এসে শিখেছি। 
এখনো নিজের বোলিং এ্যাকশন নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন পাথিরানা। বিশেষ করে ওয়াইড বলের দিকে তার আরো বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। কোচরা অবশ্য এ ব্যপারে তার উপর কোন ধরনের চাপ দেননি। বয়সের সাথে সাথে এসব ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা। 
২০২০ ও ২০২২ অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ^কাপ খেলার পর শ্রীলংকান জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া পাথিরানার জন্য সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার উপর আইপিএল খেলার পর আবু ধাবীতে টি-টেন  খেলার সুযোগ পেয়েই তার জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়। ভারতের মাটিতে বিশকাপকে সামনে রেখে শ্রীলংকার প্রধান কোচ ক্রিস সিলভারউডও তার তরুণ দুই শিষ্য পাথিরানা ও ওয়েলালাগের উপর অনেকটাই আস্থা রাখছেন।