বাসস
  ১৭ জুন ২০২৪, ১৫:২৪

বেলিংহামের একমাত্র গোলে জয় দিয়ে ইউরো যাত্রা শুরু ইংল্যান্ডের

জেলসেনকার্চেন, ১৭ জুন ২০২৪ (বাসস/এএফপি) : সার্বিয়ার বিপক্ষে কাল ১-০ গোলের জয় দিয়ে ইউরো যাত্রা শুরু করেছে ফেবারিট ইংল্যান্ড। ম্যাচে জয়সূচক গোলটি করেছেন জুড বেলিংহাম। ফেবারিটের তকমা গায়ে নিয়ে জার্মানীতে খেলতে আসলেও প্রথম ম্যাচে সমর্থকদের মন ভরাতে পারেনি ইংলিশরা।
রিয়াল মাদ্রিদে মিডফিল্ডার বেলিংহাম ১৩ মিনিটে হেডের সাহায্যে গোলটি করেন। জেলসেনকার্চেনে ম্যাচের একেবারে শেষভাগে এসে বদলী বেঞ্চে যাবার আগে নিজেকে প্রমান করে গেছেন বেলিংহাম। ফেবারিটের তালিকায় থাকা জার্মানী ও স্পেন যেভাবে প্রথম ম্যাচে নিজেদের আধিপত্য দেখিয়েছে দলগত ভাবে সেভাবে জ¦লে উঠতে পারেনি গ্যারেথ সাউথগেটের দল।
বড় টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডকে নিয়ে প্রত্যাশা খুব একটা বেশী কোনসময়ই থাকে না। ইউরোর  আগে পাঁচটি ম্যাচের মাত্র একটিতে জয়ী হয়ে ইংল্যান্ড জার্মানীতে খেলতে এসেছে। এর মধ্যে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ঘরের মাঠে আইসল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়।
কাল পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে ইউরো ২০২০’র ফাইনালিস্টরা মাঠে নেমেছিল। যে কারনে সমর্থকদের প্রত্যাশাও ছিল বেশী। সার্বিয়ার কোচ ড্রাগান স্টজকোভিচ ম্যাচ শুরুর আগে বেলিংহামের ভবিষ্যতে ব্যালন ডি’অর প্রাপ্তির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বর্তমান ফর্ম বিচারে নি:সন্দেহে এই মুহূর্তে বিশে^র সেরা খেলোয়াড়কে ঘিড়ে স্টজকোভিচের এই স্ট্যাটাস খুব একটা বাড়াবাড়ি ছিল না।
২০ বছর বয়সী বেলিংহাম সম্প্রতি রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছেন। সার্বিয়ান মধ্যমাঠকে তিনি কাল অনেকটা একাই এলোমেলো করে দিয়েছেন। ম্যাচ শেষে বেলিংহাম বলেন, ‘প্রতি ম্যাচেই আমি কিছু না কিছু করতে চাই। আমি ম্যাচের নির্ধারক হতে চাই। আমার ফুটবল খেলার উপলব্ধি এটাই। ফুটবল খেলা আমার সবচেয়ে পছন্দের, যে কারনে যখনই মাঠে নামি কোন ধরনের চাপ অনুভব করি না।’
১৩ মিনিটে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেবার ক্ষেত্রে বেলিংহাম তার শারিরীর দক্ষতারও প্রমান দিয়েছেন। বক্সে ঢোকার আগে থেকেই তিনি বলের জন্য মুভমেন্ট শুরু করেন। বুকায়ো সাকার ডিফ্লেকটেড ক্রস থেকে শক্তিশালী হেডে তিনি জালে বল প্রবেশ করান।
প্রথম ৪৫ মিনিট ইংল্যান্ডই আধিপত্য দেখিয়েছে। কিন্তু ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। কাইল ওয়াকার বিরতির আগে ব্যবধান দ্বিগুনের সবচেয়ে সেরা সুযোগ পেয়েছিলেন। রাইট-ব্যাক থেকে সার্বিয়ান বক্সে ঢুকে পড়ে তিনি যে শটটি নিয়েছিলেন তা অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধ ইংল্যান্ডের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র ছিল। ইংল্যান্ড তাদের লিড নিয়েই সন্তুষ্ট ছিল, কিন্তু তাদের সৌভাগ্য, গোল পরিশোধের বেশ কিছু সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি সার্বিয়ানরা। হ্যারি ম্যাগুয়েরে ও লুক শ’র  অনুপস্থিতিতে সাউথগেটের দলের রক্ষনভাগের দূর্বলতা নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই আলোচনা চলছিল। ক্রিস্টাল প্যালেসের মার্ক গুয়েহি ম্যাগুয়েরের স্থানে খেলতে নেমেছিলেন। কিন্তু ডুসান ভøাহোভিচ ও ফিলিপ মালডেনোভিচের দুটি প্রচেষ্টা তিনি প্রতিহত করতে পারেননি। এই দুই তারকার ভুলে গোল পরিশোধ করতে পারেনি সার্বিয়া। মিট্রোভিচের একটি পেনাল্টির আবেদন নাকচ করে দেয় রেফারি। লুকা জোভিচের পাস থেকে আরো একটি সুযোগ হাতছাড়া করে ডুসান টাচিচ।
সাউথগেট বলেন, দ্বিতীয়ার্ধে আমরা নিজেদের ধরে রাখতে পারিনি। জয়টা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এই ম্যাচে অবশ্যই আমাদের আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল। আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে।
দ্বিতীয়ার্ধে কনর গালাগার ও জার্ড বোয়েনকে মাঠে নামিয়ে মধ্যমাঠ শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছেন সাউথগেট। মাঠে নেমেই বোয়েন হ্যারি কেনের দিকে একটি ক্রস বাড়িয়েছিলেন। সেই ক্রস থেকে কেনের হেড সার্বিয়ার গোলরক্ষক প্রেড্রাগ রাকোভিচ সেভ করতে গিয়ে বারে লেগে ফেরত আসে। পুরো ম্যাচে প্রতিপক্ষের বক্সে এই একটি প্রচেষ্টা চালিয়েছেন কেন। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে ভøাহোভিচের ড্রাইভ কোনমতে রক্ষা করেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড।
এদিকে দিনের আরেক ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে নেদারল্যান্ডস। ডি’গ্রুপে পিছিয়ে পড়েও  ওট উইগোর্স্টের ৮৩ মিনিটের গোলে পোল্যান্ডের বিপক্ষে  জয় দিয়ে মিশন শুরু করেছে নেদারল্যান্ডস।  বদলী বেঞ্চে থেকে মাঠে নেমে দুই  মিনিটে উইগোর্স্ট ডাচদের দারুন এক জয় উপহার দেন। ইনজুরির কারনে কাল প্রথম ম্যাচ খেলতে পারেননি পোলিশ তারকা রবার্ট লিওয়ানদোস্কি।
ম্যাচ শেষে উচ্ছসিত উইগোর্স্ট বলেছেন, ‘আমি দারুন খুশী। বিশেষ করে এই ধরনের একটি টুর্ণামেন্টে এভাবে গোল করতে পারা সত্যিই বিশেষ কিছু। ব্যক্তিগতভাবে আমার একটি স্বপ্ন ছিল, এভাবে কোনদিন দলকে জয়ী করার।
হামবুর্গে ১৬ মিনিটে এ্যাডাম বুকসার হেডে এগিয়ে যায় পোলিশরা। কাউন্টার এ্যাটাক থেকে ২৯ মিনিটে গোল পরিশোধ করেন কোডি গাকপো। অরেঞ্জদের হয়ে এরপর গাকপো, মেমফিস ডিপে, ডেনজেল ডামফ্রাইস গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। উইগোর্স্টের গোলের আগে যে কারনে রোনাল্ড কোম্যানকে বেশ অস্বস্তিতে থাকতে দেখা গেছে।
১৯৮৮ বিজয়ী নেদারল্যান্ডস সাম্প্রতিক ইউরোতে খুব একটা ভাল করতে পারছেনা। ২০০৮ সালের পর থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্তও যেতে পারেনি।