মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ

বাসস
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:০৪

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : মেহেদি হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ সমতায় শেষ করল স্বাগতিক বাংলাদেশ।

সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের তৃতীয় দিন বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জয় পেল বাংলাদেশ।

সিলেটে সিরিজের প্রথম টেস্ট ৩ উইকেটে জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। ফলে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হল। ব্যাট হাতে ১০৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পর বল হাতে ৩২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রাখেন মিরাজ।

চট্টগ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিন শেষে ৭ উইকেটে ২৯১ রান করেছিল বাংলাদেশ। ৩ উইকেট হাতে নিয়ে ৬৪ রানে এগিয়ে ছিল টাইগাররা। মেহেদি হাসান মিরাজ ১৬ ও তাইজুল ইসলাম ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। 

তৃতীয় দিন প্রথম ৯ ওভারে কোন উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। এসময় গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টির কারণে ১৬ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। 

দশম ওভারের পঞ্চম বলে দিনের প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের স্পিনার ভিনসেন্ট মাসেকেসার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২০ রান করা তাইজুল।

মিরাজের সাথে অষ্টম উইকেটে ৮৪ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন তিনি। 

এরপর তানজিম হাসানকে নিয়ে আবারও বড় জুটির চেষ্টায় সফল হন মিরাজ। দলের রান ৪শ পার করে লিড বড় করতে থাকেন দু’জনে। সেই সাথে শতকের দিকে এগিয়ে যান মিরাজ। 

দলীয় ৪৩৮ রানে মিরাজ-তানজিম জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার ওয়েসলি মাধভেরে। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮০ বলে ৪১ রান করা তানজিমকে শিকার করেন মাধভেরে। মিরাজের সাথে নবম উইকেটে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি গড়েন তানজিম। 

তানজিম যখন সাজঘওে ফিরেন তখন অন্যপ্রান্তে ৯৮ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ। শেষ ব্যাটার হাসান মাহমুদকে নিয়ে ৫৩ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ১৪৩ বল খেলা মিরাজ। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। 

সাত নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করার পর ইনিংস বড় করতে পারেননি মিরাজ। মাসেকেসার পঞ্চম শিকার হিসেবে মিরাজ আউট হলে ৪৪৪ রানে থামে বাংলাদেশ। ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৬২ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১০৪ রান করেন মিরাজ। এই ইনিংস খেলার পথে টেস্টে ২ হাজার রান পূর্ণ করেন এই ডান-হাতি খেলোয়াড়। সেই সাথে বোলিং পরিসংখ্যানে ২০২ উইকেট থাকায় রেকর্ড বইয়ে সাকিব আল হাসানের পাশে বসলেন  মিরাজ। সাকিবের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ২ হাজার ও ২শ উইকেটে মালিক হলেন মিরাজ। 

এদিকে টেস্ট অভিষেকেই ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন মাসেকেসা। ৩১.২ ওভারে ১১৫ রানে তিনি ৫ উইকেট দখল করেন। এর আগে জিম্বাবুয়ের হয়ে টেস্ট অভিষেকে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন অ্যান্ডি ব্লিগনাট ও জন নিয়ুম্বু। ২০০১ সালে বুলাওয়েতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্লিগনাট ৭৩ রানে ৫ এবং ২০১৪ সালে হারারেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকে ১৫৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন নিয়ুম্বু। 

প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে স্পিনার তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে পড়ে জিম্বাবুয়ে। ষষ্ঠ ওভার পর্যন্ত ভালোভাবে কাটালেও সপ্তম ওভারে দলীয় ৮ রানেই দুই উইকেট হারায় সফরকারীরা। ওপেনার ব্রায়ান বেনেটকে ৬ ও নিক ওয়েলচকে শূন্যতে শিকার করেন তাইজুল। 

দলীয় ২২ রানে জিম্বাবুয়ে শিবিরে আঘাত হানেন আরেক স্পিনার নাইম হাসান। সিন উইলিয়ামসকে ৭ রানে সাজঘরে পাঠান তিনি। 

এরপর বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন ওপেনার বেন কারান ও অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। উইকেট পতন ঠেকিয়ে বড় জুটির পথে ছিলেন তারা। কিন্তু ৩০তম ওভারে জোড়া আঘাতে জিম্বাবুয়েকে হারের মুখে ঠেলে দেন মিরাজ। 

২টি চারে ২৫ রান করা আরভিনকে বোল্ড এবং মাধভেরেকে শূন্যতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। এক ওভার পর জিম্বাবুয়ের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটান মিরাজ।

রানের খাতা খোলার আগেই শর্ট লেগে এনামুল হককে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক তাফাদজাওয়া সিগা। ৭৩ রানে ৬ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।

এরপর ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে ১০ ও কারানকে ৪৬ রানে শিকার করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন মিরাজ। শেষ ব্যাটার হিসেবে মাসেকেসা ২ রানে রান আউট হলে ১১১ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ৭ রানে অপরাজিত থাকেন ব্লেসিং মুজারাবানি। 

ঘরের মাঠে টানা ৬ টেস্ট হারের পর প্রথম জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বরে সিলেটে নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা।

মিরাজ ৩২ রানে ৫টি, তাইজুল ৪২ রানে ৩টি ও নাইম ৩৪ রানে ১টি উইকেট নিয়েছেন। ম্যাচে সেঞ্চুরিসহ ১০৪ রান ও ৩২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন মিরাজ। সিরিজ সেরাও হয়েছেন তিনি। ১১৬ রানের পাশাপাশি পুরো সিরিজে ১৫ উইকেট শিকার করেছেন মিরাজ। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর : 

জিম্বাবুয়ে : ২২৭/১০, ৯০.১ ওভার (উইলিয়ামস ৬৭, ওয়েলচ ৫৪, তাইজুল ৬/৬০)

বাংলাদেশ : ৪৪৪/১০, ১২৯.২ ওভার (সাদমান ১২০, মিরাজ ১০৪, মাসেকেসা ৫/১১৫)

জিম্বাবুয়ে : ১১১/১০, ৪৬.২ ওভার (কারান ৪৬, আরভিন ২৫, মিরাজ ৫/৩২)

ফল : বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী

ম্যাচ সেরা : মেহেদি হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)

সিরিজ সেরা : মেহেদি হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)

সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১’এ সমতা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
২ অক্টোবর নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানানোর আহ্বান সালাহউদ্দিনের
দেশের মানুষ ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে: ড. মঈন খান
ঢাকা চেম্বারের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের শ্রীলঙ্কা সফর
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্যালকুলেটরের মডেল নির্ধারণ করে দিল বোর্ড 
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক অনুষ্ঠিত
সকল জেলায় সেবামূলক মেলার আয়োজন করা হবে: শারমীন এস মুরশিদ
প্রথমবারের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকা
উদ্দীপনের সাবেক চেয়ারম্যান মিহির কান্তিসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
বিজিবি’র অভিযানে ১৩৩ কোটি ১১ লক্ষাধিক টাকার চোরাচালানকৃত সামগ্রী জব্দ
১০