বাসস
  ১৯ জুন ২০২৩, ১৪:১৩

পেনাল্টিতে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে নেশন্স লিগের শিরোপা জিতলো স্পেন

রটারডাম (নেদারল্যান্ড), ১৯ জুন ২০২৩ (বাসস) : ক্রোয়েশিয়াকে পেনাল্টিতে ৫-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে নেশন্স লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছে স্পেন। অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার ডানি কারভাহালের গোলে স্পেনের জয় নিশ্চিত হয়। নেদারল্যান্ডের রটারডামে ফেয়েনুর্ড ডি কুইপ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে উভয় দলের কেউই কোন গোল করতে পারেনি।
স্প্যানিশ গোলক্ষক উনাই সিমন ক্রোয়েশিয়ার লোভরো মায়ার ও ব্রুনো পেটকোভিচের স্পট কিক রুখে দেন। এরপর কারভাহাল ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়ালে ২০১২ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের পর স্প্যানিশদের প্রথম শিরোপা নিশ্চিত হয়। অন্যদিকে হতাশ হতে হয় ক্রোয়েটদের।
২০১৮ বিশ্বকাপে রানার্স-আপ ও ২০২২ সালে তৃতীয় স্থান পাওয়া জøাটকো ডালিচের ক্রোয়েশিয়াকে  আরো একবার শিরোপা ছাড়াই ঘরে ফিরতে হয়েছে। কখনই দলটি  বড় কোন আসরে শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়নি। নেশন্স লিগের শিরোপা জয়ের মাধ্যমে হয়তোবা অধিনায়ক লুকা মড্রিচের বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে অন্তত একটি সাফল্য উপহার দিতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। গতকাল এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ক্যারিয়ারের ১৬৬তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন।
মার্চে ইউরো ২০২৩ বাছাইপর্বে স্কটল্যান্ডের কাছে হারের পর স্পেনের নতুন কোচ লুইস ডি লা ফুয়েন্তেতে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। কালকের এই জয় ডি লা ফুয়েন্তেকে অনেকটাই স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। একইসাথে ২০২১ নেশন্স লিগের ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হারের হতাশাও কাটিয়ে উঠলো স্প্যানিশরা।
রিয়াল ডিফেন্ডার কারভাহাল স্প্যানিশ ব্রডকাস্ট টিভিই’তে বলেছেন, ‘আমাদের জন্য এটা শিরোপা জয়ের দারুন একটি সুযোগ ছিল। কাতার বিশ্বকাপে আমরা আগেভাগেই বিদায় নিয়েছিলাম। আজ নিজেদের প্রমানে কোন ছাড় দেইনি। পেনাল্টি নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। গত কিছুদিন আমরা এটা নিয়েই কাজ করেছি। আমি জানতাম পেনাল্টি শ্যুট আউটে ঠিক কোন কাজটি আমাদের করতে হবে। সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে।’
কালকের ফাইনাল উপভোগ করতে প্রায় ২৫ হাজার ক্রোয়েট সমর্থক রটারডামে এসেছিল এবং স্টেডিয়ামের বেশীরভাগ আসনই তাদের দখলে ছিল। দর্শকদের প্রত্যাশার বিষয়ে ডালিচ আগেই সতর্ক করেছিলেন। প্রিয় তারকা মড্রিচকে নিয়ে দর্শকদের মধ্যে উচ্ছাস একটু বেশী ছিল। এই টুর্নামেন্টের পর মড্রিচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষের একটি গুঞ্জন ছিল। কিন্তু সমর্থকরা মড্রিচকে এখনই যেতে দিতে চায়না।
ম্যাচের শুরু থেকে অবশ্য স্পেনই আধিপত্য দেখিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথম প্রচেষ্টায় গাভি অবশ্য সফল হতে পারেননি। উল্টো আক্রমন করার সুযোগ পায় ক্রোয়েশিয়া। আন্দ্রেজ ক্রামারিচকে লক্ষ্য করে লম্বা পাস দেন জোসিপ জুরানোভিচ। ক্রামারিচ স্প্যানিশ গোলরক্ষক সাইমনকে একা পেয়ে শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু অমারিক লাপোর্তে দারুন দক্ষতায় শেষ মুহূর্তে তা ব্লক করেন।
ফাইনাল ফোরের আগের দুই ম্যাচে সব মিলিয়ে ১৪ গোল হওয়া সত্তেও নেশন্স লিগের আগের দুই আসরের ফাইনালের মতই কালও প্রথমার্ধ গোলশুন্য  শেষ হয়। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মত আয়োজিত নেশন্স লিগের শিরোপা জিতেছিল পর্তুগাল, ২০২১ সালে জয়ী হয় ফ্রান্স।
অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ এক লড়াইয়ে ৮০ মিনিট পর্যন্ত স্পেন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কোন শট করতে পারেনি। ক্রোয়েশিয়ার পেটকোভিচের পরিবর্তে ৬১ মিনিটে মাঠে নামা মারিও পাসালিচের হেড বারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ৪-২ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে নায়ক ছিলেন এই ক্রোয়েট মিডফিল্ডার। পাঁচ মিনিট পর স্পেন তার সেমিফাইনাল ম্যাচ জয়ে অবদান রাখা খেলোয়াড়দের মাঠে নামায়। আলভারো মোরাতার পরিবর্তে জোসেলু ও ইয়েরেমি পিনোর পরিবর্তে এ সময় মাঠে নামেন আনসু ফাতি। ৯০ মিনিটে বার্সেলোনার তরুণ ফরোয়ার্ড ফাতি গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে লাইনের উপর থেকে তা ক্লিয়ার করেন অভিজ্ঞ ইভান পেরিসিচ।
নির্ধারিত সময়ে কোন গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ডি বক্সের ভিতর বোর্না সোসাকে রুখতে গিয়ে নাচোর বিপক্ষে পেনাল্টির আবেদন করে সফল হয়নি ক্রোয়েশিয়া। স্প্যানিশ বদলী খেলোয়াড় ডানি ওলমোর শট অল্পের জন্য বারের উপর বাইরে চলে যায়।
পেনাল্টি শ্যুট আউটে প্রথম দুটি করে শটে  নিজেদের লক্ষ্য পূরনে সমর্থ হয়েছিলেন দুই দলের খেলোয়াড়রাই। । এরপর মায়ারের শট রুখে দেন সাইমন। অমারিক লাপোর্তের সামনে সুযোগ ছিল স্পেনকে জয় উপহার দেবার। কিন্তু তার শটটি বারে লাগে। এ্যাথলেটিকো বিলবাও গোলরক্ষক সিমন এরপর ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে পেটকোভিচের শট রুখে দেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কারভাহাল স্পেনকে বহুল প্রতিক্ষিত শিরোপা উপহার দেন।
২০২১ সালে ফ্রান্সের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে স্পেন বিশ্বকাপ, ইউরো ও নেশন্স লিগের শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখালো।
ম্যাচ সেরা রড্রি বলেছেন, ‘আমরা সত্যিই দারুন খুশী। এটা একটি কঠিন ম্যাচ ছিল। সবকিছুই কেমন যেন কঠিন হয়ে উঠেছিল। এই প্রজন্মের কাছে যেমন প্রত্যাশার চাপ আছে, তেমনি দলের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিও অনেক। আমরা মানসিক ভাবে অনেক বেশী শক্তিশালী ছিলাম। এখনো অনেক জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন আছে। কিন্তু শিরোপা জয়ের আনন্দই আলাদা, আমরা এখন এই জয় উদযাপন করবো।’
হতাশাজনক ম্যাচ শেষেও ডালিচ অবশ্য ইতিবাচক মন্তব্যই করেছেন , ‘আমরা একের পর এক পদক জয় করছি, যা অসাধারন। ইতোমধ্যেই তিনটি পদক পাওয়া হয়েছে। এ থেকে প্রমান হয় আমাদের মধ্যে এখনো অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় একদিন আমরা সফল হবো।’