বাসস
  ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৪:৪৮

ব্রাজিলের মুকুটবিহীন ‘রানী’ মার্তা

সাও পাওলো, ২৩ জুলাই ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : কেউ কেউ তাকে ‘স্কার্ট পড়া পেলে’ নামে ডাকতো, তবে ব্রাজিলিয়ান এই নারী ফুটবল তারকা তার সমর্থকদের কাছে ‘কুইন মার্তা’ হিসেবেই পরিচিত। চলমান বিশ্বকাপের পরে আর দেখা যাবেনা নারী ফুটবলের এই জীবন্ত কিংবদন্তীকে।
সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল কেজটিভি’তে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ৩৭ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবল নিশ্চিত করেছেন নি:সন্দেহে এটাই হতে যাচ্ছে তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। যদিও পারফরমেন্স বিবেচনায় ফুটবলের এই রানীকে তার দল প্রথমবারের মত বিশ্ব আসরের শিরোপা দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। মার্তা নিজেও ইনজুরির সাথে লড়াই করতে করতে এখন অনেকটাই ক্লান্ত।
আগামীকাল পানামার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ব্রাজিল ফিফা নারী বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করবে। তার আগে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সফল তারকা মার্তা বলেছেন, ‘এটাই স্বঅবাবিক  যে, ২০ বছর আগের মার্তা আর আমি নই। কিন্তু শারিরীক ভাবে আমি বেশ সুস্থ আছি এবং মানসিক ভাবে আরো বেশী ভাল অনুভব করছি।’
সম্প্রতি মার্তা ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন। নারী ফুটবলের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। ২০০৭ সালে সেলেসাওরা যখন প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল তখন আন্তর্জাতিক ভাবে মার্তাকে নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। এর আগে অবশ্য ব্রাজিলের হয়ে ২০০৪ সালে অলিম্পিকে রৌপ্য পদক জয় করেছেন মার্তা। চার বছর পরের অলিম্পিকেও সেই পদক ধরে রেখেছিল ব্রাজিল।
বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পুরুষ ও নারী দল মিলিয়ে পাঁচ আসরে মার্তা সর্বকালের সর্বোচ্চ ১৭ গোল করে ইতিহাস রচনা করেছেন। তার থেকে একটি কম গোল করেছেন জার্মান তারকা মিরোস্লাভ ক্লোজা। এখন তার সামনে সুযোগ সেই রেকর্ডকে আরো সমৃদ্ধ করা।
এবারের দলে মার্তা তার দীর্ঘদিনের দুই অভিজ্ঞ সতীর্থকে পাচ্ছেন না। সতীর্থ আরেক কিংবদন্তী ফোরমিগা সাতটি বিশ্বকাপ খেলার পর ২০২১ সালে অবসর নিয়েছেন। অন্যদিকে ৩৮ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানে এবারের দলে জায়গা পননি। গুরুতর হাঁটুর ইনজুরির কারনে মার্তা নিজেও প্রায় এক বছর মাঠের বাইরে ছিলেন। ২০০৩, ২০১০ ও ২০১৮ সালের তিনবারের কোপা আমেরিকা বিজয়ী মার্তা গত বছর ইনজুরির কারনে এই টুর্ণামেন্টে খেলতে পারেননি। ব্রাজিল সফলভাবে তাদের শিরোপা ধরে রেখেছিল। ফেব্রুয়ারিতে দলে ফিরে জাপানের বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয়ের মাধ্যমে ব্রাজিলকে শিবিলিভস কাপ উপহার দেন। ঐ ম্যাচে ফিরে মার্তা বলেছিলেন, ‘ক্যারিয়ারে এই প্রথমবারের মত এত লম্বা সময় আমি খেলার বাইরে ছিলাম। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি।’
মার্তা হয়তোবা ব্রাজিল কিংবদন্তী পেলের মত তিনটি বিশ্বকাপ জয় করতে পারেননি, কিন্তু নারী ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম বর্ণাঢ্য একজন খেলোয়াড় হিসেবে মার্তার নাম লেখা থাকবে। ছয়বার তিনি ফিফার বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড় বিবেচিত হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থেকে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায় । জাতিসংঘের লিঙ্গ সমতার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। ব্রাজিলের নারী ফুটবলারদের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম মার্তা।
নি¤œবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া মার্তা ভিয়েরিয়া ডা সিলভা অর্থের অভাবে স্কুলে যেতে পারেননি। নয় বছর বয়সে প্রথম শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। স্কুল লিগে খেলার মাধ্যমে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে মার্তা রিও ডি জেনিরোর একটি নারী ক্লাবে ট্রায়াল দেবার সুযোগ পান। ১৪ বছর বয়সে প্রথম ঐ সময় মার্তা ঘরের বাইরে পা রাখেন।  এক ট্রায়ালেই সকলের নজড় কাড়েন এবং ভাস্কো  দা গামা যুব দলের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই ক্লাবের সিনিয়র দল থেকেই পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরু। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ২০০৩ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে ডাক পান। বছরখানেক আগে হয়েছিল জাতীয় দলে অভিষেক। বিশ্বকাপ খেলার একমাস পর সুইডিশ ক্লাব উমেয়াতে যোগ দেন। ঐ বছরই প্রথমবারের মত বিশ্বসেরা নারী ফুটবলারের মনোনয়ন পান। এরপর ২০০৬-২০১০ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার এই ট্রফি জয় করেন। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়ে ওরলান্ডো প্রাইডের হয়ে এখনো পর্যন্ত খেলছেন।
ব্রাজিলের হয়ে রেকর্ড ১২২ গোল করেছেন। যা পেলে ও নেইমারের ৭৭ গোলের রেকর্ডকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে।