শহীদ ফারুকের স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া

বাসস
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ১৯:০৫ আপডেট: : ১৯ জুন ২০২৫, ২০:৫৩
শহীদ ওমর ফারুক -ছবি : বাসস

নেত্রকোনা, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : মানুষের সেবায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন ঢাকার কাজী কবি নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক। স্বপ্ন দেখতেন, একদিন বড় অফিসার হয়ে বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়বেন। সেই স্বপ্ন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেই বিলিয়ে দিলেন তিনি।

ওমর ফারুক নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের চারিগাঁও পাড়ার কৃষক আব্দুল খালেকের বড় ছেলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় জুলাই মাসের শুরুর দিক থেকেই তিনি ঢাকায় সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯ জুলাই রাজধানীর লক্ষ্মীবাজার এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।

ফারুকের বাবা আব্দুল খালেক বাসস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমার ছেলে বড় অফিসার হয়ে মানুষের জীবনমান বদলাতে চেয়েছিল, একটি বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু একটি গুলি সবকিছু শেষ করে দিল। আমার ছেলে লাশ হয়ে আমাদের কাছে ফিরেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদেও বরাত দিয়ে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আব্দুল খালেক বলেন, ১৯ জুলাই সকালে ফারুক তার বন্ধু মোহাম্মদ আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাকে নিয়ে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় অন্যদিনের মতো আন্দোলনে অংশ নেয়।

তিনি বলেন, ওরা মিছিল করছিল এবং ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল। দুপুরের দিকে তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে লক্ষ্মীবাজার ক্যাপিটাল গলির দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায়। একটি গুলি ওমর ফারুকের ডান বুকে বিদ্ধ হয় এবং সে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে।

আব্দুল খালেক বলেন, তখন তার বন্ধু আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন তাকে অচেতন অবস্থায় রিকশায় করে গেন্ডারিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে কোনো চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। পরে রিকশা করেই ফারুককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২১ জুলাই রাতে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সহায়তায় তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। সেদিন রাতেই পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আবেগঘন কণ্ঠে শোকাতুর বাবা বলেন, আমি আর কখনো আমার আদরের ছেলেকে ফিরে পাব না...তবুও দেশের জন্য তার এই আত্মত্যাগে আমি গর্বিত। দেশের মানুষ তাকে মনে রাখবে, তার নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

বাসসে’র সঙ্গে আলাপকালে শহীদ ফারুকের মা কুলসুম আক্তার খাতুন তার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

‘আমি এর ন্যায়বিচার চাই। আমি চাই, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি হোক’—এই কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

দুর্গাপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাকিবুল হাসান বাসস’কে জানান, শহীদ ওমর ফারুকের নাম ইতোমধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের শহীদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শহীদ ফারুকের পরিবারকে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টকে আরও জনপ্রিয় করা হবে : যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা
বিশ্ববাসীকে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে, রোহিঙ্গা সমস্যা অত্যন্ত গুরুতর : তারেক রহমান
বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে শিক্ষা ও গবেষণায় গুণগত সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে : বেরোবি উপাচার্য
বাতিল কারিকুলামের উপর প্রশিক্ষণ : প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দুদকের অভিযান
কুমিল্লায় তামাক বিরোধী প্রশিক্ষণ কর্মশালা 
শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সাথে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের আমন্ত্রণে দূতাবাসে বিএনপি প্রতিনিধি দল
পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ খুঁজতে কমিটি গঠন করবে সরকার
জান্তার বন্দিত্বে ৮০তম জন্মদিন পালন করলেন মিয়ানমারের অং সান সু চি
ডা. জুবাইদা দুঃখ-সংকটে তারেক রহমানের পাশে ছিলেন : রিজভী
১০