
ঢাকা, ১ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : তিনজন চীনা নভোচারী, যাদের একজন দেশের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ, শনিবার ভোরে ‘তিয়ানগং’ মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছেছেন। তাদের সঙ্গে মহাকাশে গেছে চারটি পরীক্ষামূলক ইঁদুর।
জিউকুয়ান থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, শেনঝৌ-২১ নামের মহাকাশযানটি শনিবার স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ২২ মিনিটে তিয়ানগং স্টেশনে পৌঁছায়।
এর আগে উত্তর-পশ্চিম চীনের ‘জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার’ থেকে যাত্রা শুরু করে মহাকাশযানটি। এটি উৎক্ষেপণ করা হয় ‘লং মার্চ-২এফ’ রকেটের মাধ্যমে।
তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনকে চীনের মহাকাশ কর্মসূচির ‘গৌরব মুকুট’ বলা হয়। এখানে তিনজন নভোচারীর দল প্রতি ছয় মাসে পালাক্রমে কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে চীন এই কর্মসূচিতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
চীন ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে ঘাঁটি স্থাপনের লক্ষ্যও রয়েছে তাদের।
এই অভিযানের নেতৃত্বে আছেন অভিজ্ঞ নভোচারী ঝাং লু। তার সঙ্গে আছেন ৩২ বছর বয়সি ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার উ ফেই, যিনি চীনের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ নভোচারী হিসেবে মহাকাশে পা রাখলেন। তৃতীয় সদস্য ৩৯ বছর বয়সি পেলোড বিশেষজ্ঞ ঝাং হংঝাং।
গোবি মরুভূমির উৎক্ষেপণ ঘাঁটি থেকে সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানান তারা। এ সময় একটি ব্যান্ডদল দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করে।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ঝাং লু বলেন, ‘আমরা সফলভাবে মাতৃভূমি ও জনগণের কাছে ফিরে আসব।’
প্রথমবার মহাকাশে যাওয়া উ ফেই বলেন, ‘নিজেকে অসাধারণ ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’
তাদের সঙ্গে মহাকাশে গেছে চারটি ইঁদুর। দু’টি পুরুষ ও দু’টি স্ত্রী। মহাকাশে ইঁদুর নিয়ে চীনের এটি প্রথম গবেষণা।
যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পর চীনই তৃতীয় দেশ, যারা মানুষকে মহাকাশে পাঠিয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের নেতৃত্বে ‘মহাকাশ স্বপ্ন’ বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে বেইজিং। এরই অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে মানববিহীন মহাকাশযান চাং’ই-৪ চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করে।
এরপর ২০২১ সালে চীন মঙ্গল গ্রহে একটি ছোট রোবট অবতরণ করায়।
‘চায়না ম্যানড স্পেস এজেন্সি’ (সিএমএসএ) বৃহস্পতিবার জানায়, ২০৩০ সালের চাঁদ অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরীক্ষা’ চালাচ্ছে।
বিজ্ঞান গবেষণাকে এগিয়ে নেওয়া ছাড়াও, শেনঝৌ-২১ দলের নভোচারীরা মহাকাশে হাঁটবেন এবং তিয়ানগং-এর বাইরের অংশে অ্যান্টি-ডেব্রিস শিল্ড (মহাকাশের বর্জ্য থেকে সুরক্ষার ঢাল) বসাবেন।
সিএমএসএ জানিয়েছে, নভোচারীরা ‘জনপ্রিয় বিজ্ঞান শিক্ষা’ কার্যক্রমেও অংশ নেবেন। এছাড়া, ভবিষ্যতের মহাকাশ প্রতিভা খুঁজতে দেশ-বিদেশে নজর দিচ্ছে বেইজিং।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নাসাকে চীনের সঙ্গে কাজ করতে নিষেধ করে। এরপর চীন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে বাদ পড়ে।
এরপর থেকে চীন অন্যান্য দেশকে তার মহাকাশ কর্মসূচিতে যুক্ত করার চেষ্টা করেছে এবং ফেব্রুয়ারিতে দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথম বিদেশি ‘তাইকোনট’ (চীনা নভোচারী) নিয়োগের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।