
ঢাকা, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : চরমোনাই মাদরাসা মাঠে তিনদিনব্যাপী অগ্রহায়ণের মাহফিল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।
জোহরের নামাজের পর বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির আমিরুল মুজাহিদিন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীরের উদ্বোধনী বয়ানের মধ্য দিয়ে অধিবেশন শুরু হয়।
আজ বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।
চরমোনাই পীর বলেন, মানুষকে আল্লাহ নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, আর দুনিয়া সেই দায়িত্ব পালনের পরীক্ষা ক্ষেত্র। তিনি বলেন, চরমোনাইর মাহফিলের কোনো দুনিয়াবি উদ্দেশ্য নেই। আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনা এবং আখেরাতমুখী করা এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
তিনি আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে সতর্ক করে বলেন, দুনিয়াবি স্বার্থে এখানে আসার প্রয়োজন নেই বরং নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে মনোনিবেশ করতে হবে। দুনিয়ার মোহ-লোভই সব অন্যায়ের মূল কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পীর সাহেব বলেন, যারা নতুন করে মাহফিলে এসেছেন তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল ত্যাগ করে আখেরাতের চিন্তাকে অন্তরে জায়গা দিন। আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ রেখে আল্লাহর নির্দেশিত পথে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় জীবনকে ইসলামের আলোকে পরিচালিত করলেই সত্যিকারের মুক্তি আসবে।
মাহফিলের নিয়ম-কানুন তুলে ধরার পাশাপাশি পীর সাহেব চরমোনাই জানান, আজ সকাল থেকে কয়েক হাজার মুসল্লিকে বিভিন্ন হালকায় বিভক্ত করে সালাত ও ইসলামের মৌলিক বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যা তিনদিনই চলবে।
মাহফিলে আগত মুসল্লীদের জন্য ১০০ শয্যার স্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ১৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আরো ৪০ জন চিকিৎসক কাজ করছেন। এছাড়া ১০টি অ্যাম্বুল্যান্স ও দু’টি নৌ-অ্যাম্বুল্যান্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। মাঠে অসুস্থ মুসল্লিদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাতে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিযুক্ত করা হয়েছে।
মাহফিলের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল টিম ও বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছে। হারানো জিনিস বা ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রতিটি মাঠে হারানো-প্রাপ্তি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। হাজারো মুসল্লির জন্য পানি, ওজু, গোসল ও মানসম্মত টয়লেট ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
তিনদিনব্যাপী এই মাহফিলের প্রথম দিনে বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিনে ওলামা সম্মেলন এবং শেষদিন ছাত্র-জনতার গণজমায়েত হবে। এছাড়া ইসলামী যুব আন্দোলন ও ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের উদ্যোগে বিশেষ মতবিনিময় সভাও হবে।
আগামী ২৯ নভেম্বর শনিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে চরমোনাই পীরের আখেরি বয়ানের মাধ্যমে মাহফিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, চরমোনাই মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৪ সালে। দরবারের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ এছহাক (রহ.) এর মৃত্যুর পরে মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.) নেতৃত্ব দেন। ২০০৬ সালে তার ইন্তেকালের পর থেকে বর্তমান আমিরুল মুজাহিদিন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।