জামালপুর, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচারে গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের ছোড়া একটি গুলি বাসার স্টিলের দরজা ভেদ করে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রাব্বী মিয়ার প্রাণ কেড়ে নেয়।
শহীদ রাব্বির বড় ভাই অন্তর মিয়া জানান, ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নিজের রুমে বসে খাবার খাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন রাব্বী মিয়া।
বাসস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমার ভাই সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি। অথচ তাকে ঘরের ভেতরে বসে খাওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করা হয়।
শহীদ রাব্বী জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার পঞ্চাশি গ্রামের আব্দুর রহিম ও রাজিয়া বেগমের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। তিনি ২০১৮ সালে নিজ গ্রামের পঞ্চাশি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর মুন্সিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন।
ছয় সেমিস্টার শেষ করে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ওয়ালটন কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন রাব্বী। সেখানে একটি পরিবারের সঙ্গে তিনি ভাড়া বাসার তৃতীয় তলায় থাকতেন।
২০ জুলাই বিকেল চারটার দিকে আন্দোলনের সময় হেলিকপ্টার থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ওই সময় একটি স্টিলের দরজা ভেদ করে একটি গুলি রাব্বীর বুকে বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান রাব্বী। সেখানে তার সঙ্গে থাকা এক নারী ও এক শিশুও গুলিবিদ্ধ হন।
পরদিন বড় ভাই অন্তর মিয়া রাব্বীর মরদেহ ফ্রিজিং গাড়িতে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।
মেধাবী সন্তানকে হারিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মা। মা রাজিয়া বেগম ছেলের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি- ফাঁসি দাবি করেন।
বড় ভাই অন্তর মিয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন। তিনি ঢাকায় টিউশনি করে পরিবারের খরচ বহন করেন। ছোট ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি সেপ্টেম্বর মাসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, আমার দরিদ্র বাবা অটোরিকশা চালিয়ে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারকে তাদের পরিবারের একজন সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরি দেওয়ার আবেদন জানান।
তিনি বলেন, আমরা সরকার থেকে আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী একটি উপযুক্ত চাকরি চাই।
রাব্বীর শাহাদাতের পর তার পরিবারকে জুলাই শহীদ স্মৃতি জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা, জেলা প্রশাসন থেকে দুই লাখ টাকা, জামায়াতে ইসলামী থেকে দুই লাখ টাকা ও বিএনপি থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বাসস’কে জানান, সরকারি পর্যায় থেকে যদি আরও বরাদ্দ আসে, তাহলে শহীদ রাব্বীর পরিবার সহায়তা পাবে।