।।আবু নাঈম ।।
পঞ্চগড়, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সৌন্দর্যের মায়ারূপ নিয়ে পঞ্চগড়ের মেঘমুক্ত আকাশে দেখা দিতে শুরু করেছে বিশ্বের তৃতীয় সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। প্রতিবছর এমন সময়ে ছবির মতো ভেসে উঠে হিমালয় পর্বতের দ্বিতীয় যুগল পর্বতমালা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এবার উত্তরের বৃষ্টির ঘনঘটা না থাকায় পরিষ্কার আকাশে মাঝে মধ্যেই উঁকি দিচ্ছে পর্যটকদের বহুল কাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি জুড়ানো এ পর্বতটি।
গত শুক্রবার দিনের বিভিন্ন সময়ে দেখা মেলে নীল আভায় মোহনীয় রূপশ্বৈর্য পর্বতমালা কাঞ্চনজঙ্ঘা। চলতি মাসে আরও কয়েকদিন দৃশ্যমান হয়েছিলো পর্বতটি। তবে সেপ্টেম্বরেই অপরূপ মায়ার কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা মিলবে এমনটি প্রত্যাশা করেননি কেউ। মূলত প্রতিবছর অক্টোবরের শুরুর দিকে মেঘমুক্ত আকাশে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার।
কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রতি বছর পর্যটকের ঢল নামে। বিনা পাসপোর্টে ভারত-নেপালে না গিয়েই তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ায় পর্যটন অঞ্চল হিসেবে সমৃদ্ধ হয়েছে জেলাটি।
এ অঞ্চলের পর্যটন স্পট ডাকবাংলোর পিকনিক কর্নার ও মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
এসব স্পটসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে পর্যটকরা দেখছেন, ছবি তুলছেন ও ভিডিও করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
জানা গেছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর তৃতীয় এবং হিমালয় পর্বতমালার দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা প্রায় ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট বা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার। এটি ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে চারটি নদীর উৎপত্তি ঘটেছে। নদীগুলি বাংলাদেশেও প্রবাহিত হয়। এখান থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব কাছে থাকায় খুব কাছ থেকে দেখা মেলে অপরূপ সৌন্দর্যের মায়াবী কাঞ্চনজঙ্খার।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষকালের আষাঢ়-শ্রাবণ মেঘের ঢল কাটলেই ভাদ্র তথা সেপ্টেম্বরে মাঝে মাঝে পরিস্কার হয়ে উঠে আকাশ। মেঘের ঘনঘটা কেটে পরিষ্কার আকাশে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য। শরৎ, হেমন্ত ও শীত ঋতুতে দেখা মেলে শ্বেতশুভ্র এই মহানায়কের। ভোরের আলো মেখে জাগতে শুরু করে সে। তারপর ক্ষণে ক্ষণে রং পালটাতে থাকে। ভোরের সূর্যের আভা ছড়িয়ে পড়লে কাঞ্চনজঙ্খা হয়ে ওঠে লাল টকটকে। দিন পেরোনোর সঙ্গে রং বদলাতে থাকে তার।
কমলা, তারপর হলুদ আবার সাদা। অপার সৌন্দর্যের বিস্তৃত ঘটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মনে হয় হাসছে পাহাড়। তার শরীর ঘেঁষে চলে গেছে বিস্তৃত হিমালয়। সবুজ ও কালো রং মেখে হিমালয়ও হয়ে ওঠে অপরূপ। তবে বর্তমান আবহাওয়ায় কখন পর্বতশৃঙ্গটির দেখা মিলবে বলা ভার। এই দেখা মিলছে আবার কয়েক দিন দেখা মেলে না।
স্থানীয় সাংবাদিক এস কে দোয়েল বলেন, ভারত-নেপালের যুগল পর্বতশৃঙ্গ হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা। পর্বত দুটি আমাদের দেশের না হলেও বাংলাদেশের একমাত্র পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে খুব কাছ থেকে পর্বতযুগলটি দেখা যায়। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখা যায়। ছবির মতো ভেসে ওঠা শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য ছাড়াও দেখা মেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল।
তেঁতুলিয়া ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক কেএম আজমিরুজ্জামান জানান, দেশের পর্যটনের অন্যতম অঞ্চল হচ্ছে উত্তরের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। আমরা পর্যটকদের জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের কন্টাক্ট নম্বরগুলি বিভিন্ন জায়গায় বিল বোর্ডেও প্রদর্শন করেছি। যাতে যে কোনো প্রয়োজনে পর্যটকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। জরুরী ফোন এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু জানান, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া একটি পর্যটন এলাকা।
এখান থেকে খুব কাছ থেকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছি।