চট্টগ্রামে কোরবানির লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া বিক্রি শুরু, লাভ নিয়ে শঙ্কায় আড়তদাররা

বাসস
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১৯:৫৭
ছবি: বাসস

চট্টগ্রাম, ২০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রামে কোরবানির লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে রাখা আড়তগুলোতে বিক্রি শুরু হয়েছে। ঢাকার ক্রেতারা (ট্যানারি মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা) চট্টগ্রাম এসে আড়তে আড়তে ঘুরে দরদাম করছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা। সরকার লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়া ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও ঢাকার ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া নিচ্ছেন না বলে লাভ নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা।

মূলত ঈদুল আজহার ১৫ দিন পর থেকেই চট্টগ্রামের আতুরার ডিপো, মুরাদপুর, বিবিরহাট, হামজারবাগের আড়তগুলো ক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ঢাকার বেশ কয়েকজন ট্যানারি মালিক চট্টগ্রাম এসে চামড়া ক্রয় করেছেন। ক্রমান্বয়ে বেচাকেনা আরও বাড়বে। যদিও এসব চামড়া বিক্রি হতে ১ থেকে দেড় মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আতুরার ডিপোর আড়তদাররা।

ঈদুল আজহায় এবার চট্টগ্রামে চার লাখ ১৫ হাজার পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। চামড়াগুলো নগরের আতুরার ডিপো এলাকায় বিভিন্ন আড়তে মজুত আছে। তবে কম দামে চামড়া কিনে লাভের আশা করলেও আড়তদাররা সেগুলো সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ঢাকার বেশ কিছু ট্যানারি মালিক চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় লাখখানেক কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে। ঢাকার আরএসএম লেদার ১৫ হাজার চামড়া নিয়েছে। ঢাকার আরও একজন বড় ক্রেতা খোকন ট্যানারি ও পান্না লেদারের মালিক আকবর হোসেন প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ হাজার চামড়া নেন চট্টগ্রাম থেকে। এ বছরও তিনি সমপরিমাণ চামড়া নেবেন বলে জানা গেছে।

১৯৯০ সালের দিকে চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু চামড়ার দরপতনে ব্যবসায় লোকসান ও ইটিপি (বর্জ্য পরিশোধনাগার) স্থাপন করতে না পারায় ২১টি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে রিফ লেদার নামে একটি প্রতিষ্ঠান টিকে আছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ৫০ হাজার চামড়া কিনেছে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির আহ্বায়ক আবদুল জলিল বলেন, এবার চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। ছোট আকারের গরুর চামড়া ৩০০-৪০০ টাকা, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৫০০-৬০০ টাকা এবং বড় আকারের গরুর চামড়া ৬০০-৭০০ টাকা দরে আড়তদাররা কিনেছেন।

তিনি বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। সেই চামড়া তিন-চার হাত ঘুরে আতুরার ডিপো এলাকার আড়তে আসতে দাম অন্তত দু-তিন গুণ বেড়ে যায়। এদিকে অতিরিক্ত গরমে চট্টগ্রামে ৫০০-৬০০ পিস চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

চামড়ার আড়তদার সাইফুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রামে ট্যানারি না থাকায় চামড়া বিক্রির জন্য ঢাকার ট্যানারিগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। ঢাকায় বর্তমানে ২২৫টি ট্যানারি রয়েছে। এর মধ্যে খোকন লেদার, ভুলুয়া ট্যানারি, সালমা ট্যানারি, মহুয়া ট্যানারি, পান্না লেদারসহ ছোট-বড় প্রায় ২০টি ট্যানারি চট্টগ্রাম থেকে চামড়া কেনে। বেশির ভাগ ট্যানারি মালিক এখনো আসেননি।

কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন জানান, সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই দামে ট্যানারি মালিকরা চামড়া নিচ্ছেন না। সরকার লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়া ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়ত থেকে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া নিচ্ছেন ৩৮-৪০ টাকায়। এতে চট্টগ্রামের চামড়ার আড়তদার লোকসানের আশঙ্কা করছেন। আমরা আত্মীয়-স্বজন থেকে টাকা ধার করে চামড়া সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু লাভের মুখ দেখি না।

প্রতিটি চামড়ায় মাত্র ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় ঢাকার ক্রেতারা বাকিতে চামড়া নিয়ে এই বছরের টাকা পরের বছরে দিয়ে থাকেন। এবার চট্টগ্রাম মহানগরী ও ১৫ উপজেলায় ৪ লাখ ১৫ হাজার ৩৫১ পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছেন আড়তদাররা। এর মধ্যে গরুর চামড়া তিন লাখ ১৫ হাজার ৩৫১ পিস। মহিষের চামড়া ১০ হাজার ৫০০ পিস। ছাগলের চামড়া ৫২ হাজার ৫০০ পিস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নাটোরে বাস-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ২
চাঁদপুরে ১৩ জনকে ব্ল্যাক বেল্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান
জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত : এটিএম মাসুম
ইরান-ইসরাইল সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে : এরদোয়ান
ময়মনসিংহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত, আহত ২০
অনূর্ধ্ব-১৯ সিক্স-এ-সাইড ক্রিকেট দিয়ে টেস্ট মর্যাদার ২৫ বছর উদযাপন করবে বিসিবি
বিদেশের মাটিতে প্রথম ফাইফার নাইমের
ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছে তারাই জেল খেটেছে : এ্যানি
দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ময়দানে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে : শফিকুর রহমান
তারেক রহমানের ফেরার প্রস্তুতি চলছে : আমীর খসরু
১০