ঢাকা, ২৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র গ্রীষ্মে, তুষারমানব ও স্লেজচিত্র আঁকা ধাতব ক্যানগুলো তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এসব ক্যানের উৎপাদকরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ ইস্পাত শুল্কের কারণে চরম চাপে রয়েছেন।
বেলক্যাম্প, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এএফপি জানায়, বাল্টিমোরের উত্তর-পূর্বে মেরিল্যান্ডের বেলক্যাম্পে অবস্থিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্যান কারখানার সিইও রিক হিউথার জানিয়েছেন, কীভাবে তিনি ১৪ বছর বয়সে পারিবারিক এই ব্যবসায় কাজ শুরু করেন।
৭৩ বছর বয়সী হিউথার জানান, তিনি তার প্রতিষ্ঠানকে আগামী প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে সেই কাজটি এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
হিউথার এএফপিকে বলেছেন, আমরা বর্তমানে এক বিশৃঙ্খলার মধ্যে বাস করছি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব নেওয়ার পর, ট্রাম্প আমদানি করা স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যা পরে দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এই উচ্চ শুল্ক ‘ইনডিপেন্ডেন্ট ক্যান’-এর কার্যক্রমে বড় প্রভাব ফেলেছে।
হিউথার বলেন, শেষ পর্যন্ত তাকে পণ্যের দাম বাড়াতেই হবে।
কারখানায় টিন-আবৃত স্টিল প্লেট প্রেসের আওতায় পড়ে বিস্কুট, শুকনো ফল, কফি ও মিল্ক পাউডারের কন্টেইনারে রূপান্তরিত হয়। তবে মার্কিন উৎপাদিত টিনপ্লেটের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
হুয়েথার বলেন, আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ স্টিলই দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে আমরা যা তৈরি করি তা আমাদের মোট চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ পূরণ করতে পারে। যদিও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন শিল্পকে বাড়ানোর পক্ষে। তবে ট্রাম্পের কৌশল নিয়ে হুয়েথার বেশ উদ্বিগ্ন ।
ট্রাম্প অনেক সময় উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, পরে সেগুলোর কিছু আবার স্থগিত করেন বা তুলে নেন এবং এমন সব পণ্যের ওপর শুল্ক বসান, যা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিতই হয় না।
বর্তমানে ‘ইনডিপেন্ডেন্ট ক্যান’-এর চারটি কারখানায় প্রায় ৪০০ কর্মী কাজ করছেন এবং কোম্পানি এখনই কোনো ছাঁটাই করছে না। তবে, প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে গত বছর আইওয়াতে প্রতিষ্ঠানটির একটি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
হুয়েথার মনে করছেন, বর্তমানে স্টিলের উপর ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে তাকে পণ্যের দাম ২০ শতাংশেরও বেশি বাড়াতে হতে পারে। কারণ টিনপ্লেট তার উৎপাদন ব্যয়ের একটি বড় অংশ।
এদিকে, অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ ও নিজস্ব ব্যবসা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় কিছু ক্রেতা ইতোমধ্যে তাদের অর্ডার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছেন।
যদিও কিছু ক্রেতা এখন আরও বেশি আমেরিকান পণ্য কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু এই প্রবণতা কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে হুয়েথার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
কোভিড-১৯ মহামারির সময়কে স্মরণ করে বলেন, যখন চীন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ও বন্দরগুলো অচল ছিল, তখন আমাদের ব্যবসা ৫০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু মহামারি শেষে সবাই আবার চীনের দিকে ফিরে গেছে।
তিনি বলেন, আজ যদি কেউ আমাদের কাছে আসে, আমরা অবশ্যই তাদের অর্ডার গ্রহণ করব। এর জন্য আমরা চাই অন্তত দুই বছরের একটি চুক্তি করতে।
প্রায় একশ বছরের পুরোনো এই কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়েছিল গ্রেট ডিপ্রেশন কালে। চলমান সংকটেও টিকে থাকবে বলে হুয়েথার আশাবাদী।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের ব্যবসা টিকে থাকবে, তবে আগামী ছয় মাসে আমরা কী বিক্রি করব, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।