
চট্টগ্রাম, ২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) যৌথ উদ্যোগে আজ চট্টগ্রামে সিএসই কার্যালয়ে ‘এএমএল/সিএফটি কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড রিস্ক বেইসড সুপারভিশন’ শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সিএসই’র এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্ট সকল স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলারের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ইডি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার এবং চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন বলেন, মানি লন্ডারিং/কাউন্টারিং দ্য ফিনান্সিং অফ টেরোরিজম একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্লোবাল বিষয়। গ্লোবালি যে কোনো দেশের বাজার অন্য বাজারের সাথে যত বেশী ইন্টিগ্রেটেড হয়, এই বিষয়টির গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, যখন গ্লোবাল ইন্সট্রুমেন্টগুলো ট্রেড হয়, তখন দেশগুলোর মধ্যকার অনেক দিক বিবেচনায় এই বিষয়গুলোর প্রাধান্য দেওয়া আবশ্যকীয় হয়ে পরে। আমাদের বাংলাদেশ এখনও ফ্রন্টিয়ার মার্কেট পর্যায়ে আছে, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পর ইমার্জিং মার্কেটে উন্নীত হতে হলে এই বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
সাইফুদ্দিন আরও বলেন, ‘নো ইয়োর কাস্টমার/ক্লায়েন্ট (কেওয়াইসি)’। আপনার ক্লায়েন্ট সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা রাখা হলো একটি কার্যকরী পদ্ধতি, যার দ্বারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কর্মকর্তারা চিনতে সক্ষম হবেন অর্থ পাচারের প্রচেষ্টার সাথে কে বা কারা জড়িত।
কমিশনার সাইফুদ্দিন বলেন, ‘আপনার প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত সকল ক্লায়েন্টের সিকিউরিটি এবং ক্যাশ ট্রানজেকশনের বিষয়গুলো ভালোভাবে বিবেচনায় নিতে হবে এবং ইন্সুলেটেড করতে হবে। যাকে, বলা হয় প্লাম্বিং অর্থাৎ ট্রাস্ট এবং কাস্টোডিয়ান প্লাম্বিং।’
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে সিকিউরিটি বা টাকা যা-ই লেনদেন হচ্ছে তার মাধ্যমে আইনের কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে কিনা তা দেখা হলো এন্টি মানি লন্ডারিং আইন এর মূল বিষয় এবং সব সময় স্ক্রুটিনি কার্যক্রম ঠিকমতো পরিচালনা করতে হবে। সুতরাং, এই ক্যাশ এবং ট্রেড যেকোনো লেনদেনে আমরা সঠিকভাবে সব সময় সচেষ্ট থাকবো কোনোভাবেই যেন আমাদের কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের মানি লণ্ডারিং এবং সন্ত্রাসী অর্থায়নের কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।
বিশেষ অতিথি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন হবে টেকসই উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের আস্থা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে একটি শক্তিশালী এএমএল সিএফটি কমপ্লায়েন্স কালচার গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। আমরা সবাই জানি, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থ পাচার, জালিয়াতি এবং সন্ত্রাসী তহবিল সংগ্রহ হলো আন্তর্জাতিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর প্রভাব থেকে আমাদের পুঁজিবাজার সম্পূর্ণ মুক্ত নয়।
তিনি আরও বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো অবৈধ লেনদেনের সুযোগ পায়, তবে তা কেবল বাজারের স্বচ্ছতা নষ্ট করে না, বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা, দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে এবং আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করে।
সূচনা বক্তব্যে সিএসইর চিফ রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, অপ্রদর্শিত আয়কে লুকানোর যে প্রচেষ্টা তাকে মানি লন্ডারিং বলা হয়। এর শুরুটা ছিল এমন যে, একজন ব্যক্তি তার অবৈধ টাকাকে বৈধ করার জন্য নতুন একটি কোম্পানি গঠন করেন এবং বৈধ করেন, অনেকটা কালো কাপড়কে ধুয়ে সাদা করার মতো।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের পুঁজিবাজারে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং নতুন নতুন ডাইমেনশনের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জও আছে। সেগুলো মোকাবিলা করে কাজ করতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত স্টেকসমূহ বিশেষ করে কমিশন, এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ হাউস এবং মধ্যস্থতাকারীসহ সকল অংশীজনের এএমএল/সিএফটি কমপ্লায়েন্সে কাঠামোগত দায়বদ্ধতা রয়েছে।