বাসস
  ২৭ জুলাই ২০২৩, ১০:০৮

নাটোরে প্রশান্তির রঙ ছড়াচ্ছে এডেনিয়াম ফুল

।। ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন।।
নাটোর, ২৭ জুলাই, ২০২৩ (বাসস) : প্রায় সারা বছর ধরে রাশি রাশি ফুল দিচ্ছে এডেনিয়াম। অবিনাশী এ ফুল অকৃপণভাবে বাহারী রঙ ছড়িয়ে যাচ্ছে। বৈচিত্রময় এডেনিয়ামের রঙে শুধুই মুগ্ধতা ছড়িয়ে থাকে। নাটোরে এডেনিয়ামের এ মুগ্ধ রাজ্য গড়ে তুলেছেন সুমনা।
এডেনিয়াম বা ডেজার্ট রোজকে বলা যেতে পারে মরু গোলাপ। এ ফুল গাছের উৎপত্তি সাব-সাহারান আফ্রিকার মরুভূমি এবং আরব উপদ্বীপে। এডেনিয়াম মূলত সাকুলেন্ট প্রজাতির ছোট্ট একটা রুপ-যা ১৭৫২ সালে সর্বপ্রথম কেনিয়াতে খুঁজে পাওয়া যায়। মরুভূমি উৎপত্তিস্থল হলেও বর্তমানে পৃথিবীর সর্বত্র এডেনিয়ামের দেখা পাওয়া যায়। ফুলের রঙের বৈচিত্রতা, অদ্ভুত সুন্দর বনসাই আকার আর অতিমাত্রায় খরা সহনশীলতার কারণে বিশ্বব্যাপী এটি সমাদৃত।
¯œাতকোত্তর শেষ করা গৃহিনী সুমনার এক দশক আগে বৃক্ষমেলায় নজর কাড়ে একটা এডেনিয়াম। বাড়িতে এনে পরম মমতায় শুরু হয় পরিচর্যা। বাহারী ফুলে প্রশান্তির পরশ। কৌতুহলী মনে শুরু করেন এডেনিয়ামের অনলাইন সব ভিডিও চিত্র দেখার কার্যক্রম। দেখতে দেখতে মুগ্ধতায় জড়িয়ে যাওয়া। শুরু হলো এডেনিয়াম গাছের সংগ্রহ অভিযান। সুমনা’র বাড়ির ছাদে এখন তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড আর ফিলিপাইনের পাঁচশ’ ভ্যারাইটি। গাছের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। একই সাথে চলছে সীড আর গ্রাফটিং এর মাধ্যমে নতুন চারা তৈরী। বাড়ির ছাদ পেরিয়ে এডেনিয়ামের আরো একটা উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছে শহরতলীর নারায়নকান্দিতে। আরো একটা উদ্যানের পরিকল্পনা বড়হরিশপুর বাইপাসে। 
দু’জন কর্মী ছাদ বাগানে কাজ করলেও সুমনা নিজের হাতেই গ্রাফটিং এর কাজ করেন। গাছের আবাস মিডিয়াগুলো বিশেষ প্রক্রিয়ায় পাতা পচা, হাড়কুচি, শিংকুচি, ধানের চিটা, ডোমার বালি আর ভার্মিকম্পোস্ট দিয়ে তৈরী। মিডিয়াগুলোর উপাদান শীতের শেষে একবার পরিবর্তন করা হয়-যখন গাছগুলো শীতনিদ্রা শেষে নতুন ফুল-পাতাতে সুশোভিত হওয়া শুরু করে।
সুমনা’র ছাদ উদ্যানে বাহারী ফুলের প্রাচুর্য। কিছু রঙ তো রীতিমত বিস্ময়ের। যেন এ রঙের কোন নাম নেই। সিংগেল লেয়ার, তাইওয়ান-২, ম্যাপল, পারপেল ওয়াইন্ডমিল, ইয়োলো ইমপেরর, ব্লাক লাভার, এঞ্জেলা, সুগার ম্যাপল, জলি, গোল্ডফিশ, এ্যাডাম, ক্রীসপাম, পার্পেল স্টর্ম, ডাবল স্টার, পমিগ্রানেটসহ আরো অনেক। কিছু গাছের পাতা আকর্ষণীয়। আবার গাছের কান্ডই যেন অপার বিস্ময়। এমনই বাদামী রঙের নোভা তাঞ্জানিয়া গাছটা সংগ্রহ করেছেন সুমনা ৩০ হাজার টাকায়। আছে আরব-ইয়েমেনের অবেসাম।
সুমনা’র ছাদ উদ্যান খানিকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। মুলত গাছের কেনাবেচা চলে অনলাইনে। মাসে বিক্রি অন্তত লক্ষ টাকা। 
সুমনা বলেন, আমার আছে দুই কন্যা। কিন্তু সব গাছই আমার সুকন্যা! পরম মমতায় ওদের আগলে রাখি। বাহারী রঙের এডেনিয়াম ফুল দীর্ঘদিন ধরে ফুটে থাকে। তাই বাড়ির ছাদ, উঠোন বা সূর্যের রোদবহুল বাড়ির লনে এডেনিয়াম গাছ শোভাবর্ধন করে। শুধু শীতকালে ঘুমিয়ে থাকা গাছগুলো প্রায় সারাবছর জুড়ে ফুল দেয়। শীত আর অতিবৃষ্টি ছাড়া সব পরিবেশেই এসব গাছ টিকে থাকে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সুমনা বললেন, এডেনিয়াম ফুলকে সার্বজনীন করতে চাই। সব বাড়ি যেন হয় এডেনিয়ামের বাড়ি, ফুলে ফুলে শোভিত!
নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, নাটোরে এডেনিয়াম ফুলের পথিকৃৎ সুমনা। আমার বিশ্বাস, মেধা আর একনিষ্ঠতা দিয়ে তিনি এগিয়ে যাবেন অনেকদূর।