
টাঙ্গাইল, ২৫ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : টাঙ্গাইলের প্রতিভাবান অলরাউন্ডার রিজান হোসেন নিজেকে একদিন জাতীয় দলের জার্সিতে দেখতে চান। সেই স্বপ্নের পথেই ধীরে ধীরে এগিযে যাচ্ছেন রিজান।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণে নিয়মিত অনুশীলণ চালিয়ে যাচ্ছেন রিজান। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জয়ী ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম একজন খেলোয়াড় ছিলেন রিজান হোসেন। ব্যাটিংয়ে ইনিংস উদ্বোধনের পাশাপাশি বোলিংয়েও নতুন বল তারই হাতে ওঠে।
টাঙ্গাইল স্পোর্টস একাডেমিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের সুফল হিসেবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে নিজেকে একজন অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত করে তুলেছেন রিজান। জেলা ক্রিকেট কোচ আরাফাত রহমানের মনোযোগী ছাত্র বয়স ভিত্তিক পর্যায় থেকে প্রতিভার জ্যোতি ছড়িয়ে এখন বাংলাদেশ যুব অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের অপরিহার্য একজন সদস্য।
অতীতে টাঙ্গাইল জেলার হয়ে আবু নাসের মানিক, প্রয়াত কুন্ডল চন্দ্র পাপন, জয়রাজ শেখ ইমন যুব বিশ্বকাপ খেলে খুব বেশীদুর এগুতে না পারলেও রিজান হোসেনকে নিয়ে টাঙ্গাইলবাসীর স্বপ্ন কিছুটা ভিন্ন। রিজান একদিন জাতীয় দলে খেলে টাঙ্গাইলের সুনাম বৃদ্ধি করবেন এমন আশা তারা করতেই পারেন। ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ থেকেই রিজানের ওপর তারা আস্থা রেখে চলেছেন।
টাঙ্গাইল শহরের প্যারাডাইস পাড়ায় জন্ম নেওয়া আবুল হোসেন ও রাবেয়া দম্পতির ছেলে রিজান হোসেন। ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায় দারুণ আগ্রহী ছিলেন। পড়াশুনা শেষ করে বাকী সময়টা ক্রিকেটের পেছনে ছুটে বেড়াতেন।
বাসস’র সাথে একান্ত আলাপকালে টাঙ্গাইলের প্রতিভাবান এই খেলোয়ার রিজান হোসেন জানান, বাংলাদেশ জাতীয় দলে নাম লিখিয়ে বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে চান তিনি।
রিজান বলেন, ‘আমার খেলার কথা ছিলো বিগত যুব বিশ্বকাপে। ভারত সফরে আশিকুর রহমান শিবলী ব্যাটিংয়ে খুব ভালো করলে আমার নাম চলে আসে অতিরিক্ত তালিকায়।
জাতীয় পর্যায়ে ভালো ক্রিকেট খেলার পুরস্কার স্বরূপ এ বছর বাংলাদেশ যুব দলের গুরুত্বপূর্ন সদস্য হয়েই এশিয়া কাপে খেলেছি। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন দলের হয়ে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেছি। ফাইনাল ব্যাট হাতে ৪৭ রান ও এক উইকেট নিয়ে দলের শিরোপা জয়ে ভূমিকা রাখি।’
এছাড়া এ বছর অনূর্ধ্ব ১৯ শ্রীলংকা সফরে ১৮৯ রান ও চার উইকেট দখল করেন রিজান। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে এ বছরের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে সফরে সুযোগ পান।
রিজান হোসেন জানান, টাঙ্গাইলের চার থেকে পাঁচজন জাতীয় পর্যাযয়ে ক্রিকেট খেলোয়াড় এখনও পাইপ লাইনে আছে। তারা অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ ও ১৮ জাতীয় দলে ঢুকতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশে লিটন কুমার দাস এবং বিদেশে ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার বেন স্টোকস তার প্রিয় খেলোয়াড়।
রিজান হোসেনের বাবা আবুল হোসেন বাসস কে জানান, রিজানের বয়স যখন আট বছর তখন থেকে তার ক্রিকেটের প্রতি অন্যরকম ভাললাগা ও ভালোবাসা জন্মে।
আমাদের বাসার সামনে টাঙ্গাইল ঈদগাহ মাঠে বিকেলে ছেলেরা ক্রিকেট খেলতো। আমি প্রায় সময় লক্ষ্য করতাম রিজান প্রতিদিন সেখানে গিয়ে ক্রিকেট খেলা মনোযোগ দিয়ে দেখছে। কিছুদিন পরেই ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য আমার কাছে জানায়। পরে স্থানীয় কোচ আরাফাত রহমানের কাছে গিয়ে টাঙ্গাইল স্পোর্টস একাডেমিতে ভর্তি করে দেই। এর পর আর রিজান কে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
তিনি আরো জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীযয় পর্যায়ে ভাল ক্রিকেট খেলে সবার নজরে আসে সে। ২০১৯ সালে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে তিনদিনের ম্যাচে প্রথমে সেঞ্চুরি করে নিজের জাত চেনান। ঐ ম্যাচে তার গড় স্ট্রাইক রেট ছিল ৫০’র উপর।
ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি বর্তমানে রিজান টাঙ্গাইল শহরের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবা হিসেবে এখন একটাই স্বপ্ন রিজান যেন বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পায়। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে এজন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
স্থানীয় ক্রীড়া সাংবাদিক মোজাম্মেল হক জানান, রিজান হোসেন একজন পরিশ্রমী ও মেধাবী অলরাউন্ডার। পরিশ্রমই রিজানকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ জাতীয় দলে স্থান করে দিবে। জেলার বর্তমান সেরা ক্রিকেটার রিজান। আশাকরি বাংলাদেশেরও সেরা ক্রিকেটার হতে পারবে। ওর মতো অলরাউন্ডার ক্রিকেটার বাংলাদেশ ক্রিকেটে বড় প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, যুগ যুগ ধরে অবহেলিত স্থানীয় ক্রিকেটে আধুনিক কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে জেলা পর্যায় থেকে রিজানের মতো ভাল ক্রিকেটার উঠে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগের প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের হেড কোচ ও টাঙ্গাইল স্পোর্টস একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা আরাফাত রহমান জানান, ক্রিকেটে বাংলাদেশের পাইপলাইন শক্ত করতে মনোযোগ দিয়েছে বিসিবি। এর ধারাবাহিকতায় জেলা পর্যায়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড় অন্বেষণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ক্রিকেটার রিজান হোসেন আমার স্পোর্টস একাডেমীর ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই সে মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। কাতারে অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে টাঙ্গাইলের ছেলে রিজান হোসেন খেলেছে। এটা টাঙ্গাইলের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের বিষয়। টাঙ্গাইল থেকে এ পর্যন্ত কোন ক্রিকেটার জাতীয় দলে সুযোগ পায়নি। তবে আমার আমার দৃঢ় বিশ্বাস সে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার যোগ্যতা রাখে। আমি তাদের সর্বাঙ্গীণ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। স্থানীয় পর্যায়ে জিমনেশিয়াম, ইনডোর, বোলিং মেশিনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেলে রিসান হোসেন এর মত আরো ভালো খেলোয়াড় টাঙ্গাইল থেকে বের হয়ে আসবে।