ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস): চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বুধবার মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই সফরের লক্ষ্য হলো বেইজিংকে আঞ্চলিক একনায়ক নয়, বরং নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করা।
কুয়ালালামপুর থেকে এএফপি জানায়, এই সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে বের হন শি জিনপিং। এরই মধ্যে তিনি ভিয়েতনাম সফর করেছেন, আর বৃহস্পতিবার যাবেন কম্বোডিয়ায়। এ সফরের পেছনে বেইজিংয়ের কৌশল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাস্তিমূলক শুল্কনীতির বিকল্প হিসেবে নিজেদের স্থিতিশীল অংশীদার হিসেবে তুলে ধরা।
বুধবার মালয়েশিয়ার স্বর্ণগম্বুজ বিশিষ্ট রাজপ্রাসাদে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজা সুলতান ইব্রাহিম শিকে স্বাগত জানান। লাল গালিচা সংবর্ধনায় চীনা প্রেসিডেন্ট সম্মানরক্ষী দল পরিদর্শন করেন। এ সময় রাজকীয় ব্যান্ড সংগীত পরিবেশন করে।
রাজপ্রাসাদে রাজা ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজের পর শি জিনপিং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে কুয়ালালামপুরের উপকণ্ঠে অবস্থিত প্রশাসনিক নগরী পুত্রাজায়ায় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক বিষয়ে আলোচনা করেন।
এ সময় উদীয়মান প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, গণমাধ্যম, চলচ্চিত্র ও পর্যটন খাতে একাধিক সহযোগিতা চুক্তি বিনিময় করা হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় আনোয়ার ইব্রাহিম তাঁর সরকারি বাসভবনে শি জিনপিংয়ের সম্মানে নৈশভোজ আয়োজন করা হয়।
মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ও কৌশলগত অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খো ইং হুই বলেন, ‘এটা শুধু বন্ধুত্বের বিষয় নয়, বরং আঞ্চলিক শক্তির কেন্দ্রকে বেইজিংয়ের দিকে পুনঃসংলগ্ন করার কৌশল।
’
তিনি এএফপিকে বলেন, এই সফর এক ধরনের কৌশলগত পরীক্ষা- যার মাধ্যমে বোঝা যাবে, মার্কিন শুল্কনীতি যখন বৈশ্বিক বাজারকে বিঘ্নিত করছে, তখন আঞ্চলিক সংহতির জন্য বেইজিং কতটা গ্রহণযোগ্য।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে, যা অনেক সময় ওয়াশিংটনের মিত্রদেরও বিরূপ করে তুলছে। মালয়েশিয়া চলতি বছর আসিয়ানের সভাপতি দেশ।
‘নীরব হুঁশিয়ারি’
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ শতাংশ শুল্কের শিকার হয়েছে আসিয়ান সদস্য ভিয়েতনাম, আর ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ক্যাম্বোডিয়ার পোশাক শিল্পের ওপর। মালয়েশিয়ার ওপর চাপানো হয়েছে ২৪ শতাংশ শুল্ক।
যদিও ৯০ দিনের জন্য এসব শুল্ক স্থগিত রয়েছে, তবে ট্রাম্প আগেই ঘোষণা দিয়েছেন- কোনো দেশই ‘মুক্ত নয়’।
খো ইং হুই বলেন, ‘আঞ্চলিক পরিপ্রেক্ষিতে শি জিনপিং সম্ভবত চীনকে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করবেন- একনায়ক হিসেবে নয়।’
‘একই সঙ্গে, তাঁর বার্তায় রয়েছে একটি নীরব হুঁশিয়ারি—এটি হলো: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি কিংবা জোট যেন এশিয়ার নিজস্ব আঞ্চলিক সংহতিকে বিঘ্ন না ঘটায়।’
প্যাসিফিক রিসার্চ সেন্টার অব মালয়েশিয়ার বিশ্লেষক ওহ এই সান বলেন, ‘শির সফর অনেকটা ঝড়ের মধ্যে উষ্ণতা খুঁজতে বন্ধুদের একসঙ্গে জড়ো হওয়ার মতো।’
মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় পৌঁছে শি বলেন, তাঁর এই সফর চীন-মালয়েশিয়া সম্পর্কের আরেকটি ‘সুবর্ণ পঞ্চাশ বছর’-এর সূচনা করবে বলে তিনি আশা করেন।
কুয়ালালামপুরে চীনা দূতাবাসের দেওয়া এক বিবৃতিতে শি বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এই সফর ফলপ্রসূ হবে।’
গত বছর চীন ও মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, যদিও দক্ষিণ চীন সাগরের কিছু অংশ নিয়ে উভয়ের দাবি রয়েছে।
গত ১৬ বছর ধরে চীন মালয়েশিয়ার সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। মালয়েশিয়ার বৈদেশিক মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছর দুই দেশের মোট বাণিজ্য মালয়েশিয়ার বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১৬.৮ শতাংশ ছিল।
মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার দৈনিক ‘দ্য স্টার’-এ প্রকাশিত এক মতামত নিবন্ধে শি জিনপিং বলেন, চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করে সুরক্ষাবাদ প্রতিরোধ করবে এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীল রাখবে।
তিনি লেখেন, ‘আমরা বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখব, বৈশ্বিক শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখব এবং উন্মুক্ত ও সহযোগিতাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পরিবেশ রক্ষা করব।’
বৃহস্পতিবার শি জিনপিং যাবেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র কম্বোডিয়ায়, যেখানে গত কয়েক বছরে বেইজিংয়ের প্রভাব অনেক বেড়েছে।