।। আজাদ রুহুল আমিন ।।
বাগেরহাট, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : জেলার কচুয়া উপজেলায় এবছর ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। ধানের চেয়ে কম খরচে ভুট্টার চাষ এবং বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সোনালি দানা খ্যাত ভুট্টার পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাছের প্রধান খাদ্য হিসেবেও ভুট্টা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এলাকার শত শত মৎস্য খামারি তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে ভুট্টা চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ভুট্টা বাজারে বিক্রি করছেন। এ উপজেলায় এ বছর ১৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে, যা গতবারের তুলনায় ১৫ হেক্টর বেশি।
উপজেলার শিয়ালকাঠি, ছোটবগা ও মাদারতলা এলাকায় ব্যাপকহারে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, বছরে দুইবার ভুট্টা চাষ করা যায়। ভুট্টা বপনের সময় রবি মৌসুমে অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এবং খরিপ-মৌসুমে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। রবি মৌসুমে ১২৫-১৩০ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৮০-৯০ দিনে ভুট্টা তোলার উপযুক্ত হয়। প্রতি হেক্টরে ভুট্টার ফলন রবি মৌসুমে ৩.৫-৪.০ টন এবং খরিপ মৌসুমে ২.৫-৩.৫ টন।
কচুয়া এলাকায় এরই মধ্যে ভুট্টা বিক্রির ধুম পড়েছে। ভুট্টা অনেক লাভজনক ফসল। ভুট্টাকে সোনালি দানা বলা হয় । ভুট্টার সবুজ পাতা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টা গাছ জ্বালানি হিসেবে ও ভুট্টার গাঠ, খোসা, পাতা সবই কাজে লাগে। এগুলো বিক্রি করে কৃষক তাদের জমিতে চাষকৃত খরচের অর্থ উঠিয়ে নিচ্ছেন।
কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এক একর জমিতে ভুট্টা চাষ করতে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি শতকে ৩০ কেজির মত ফলন পাওয়া যায়। প্রতি মণ ১৩’শ থেকে ১৪’শ টাকায় বিক্রি হয়।
গজালিয়ার মাদারতলা গ্রামের কৃষক অ্যাডভোকেট মো. সবুর শেখ বাসসকে জানান, গত বছর ১ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে ১ লাখ টাকা বিক্রি করেন। এবার অতিরিক্ত আরো ৫০ শতক জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন।
এ বছর ভুট্টা থেকে পৌনে ২ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন ।
তিনি আরও জানান, বাজারে মাছের খাবারের দাম বেশি হওয়ায় ভুট্টার চাহিদা বেড়েছে। ভুট্টা মাছের খাবার হিসেবে খুব ভালো। তিনি ভুট্টা চাষের পাশাপাশি নিজের মৎস্য প্রকল্পের জন্য নিজস্ব পদ্ধতিতে ভুট্টা শুকিয়ে সংরক্ষণ করেন। তাই তাকে মাছের খাবারও বেশি দাম দিয়ে বাইরে থেকে কিনতে হয়না।
মাদারতলা গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম সিকদার জানান, গত বছর ৭৪ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করে ৭৪ হাজার টাকা আয় করেছেন। এ বছর তিনি দেড় একর জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন। এবার আরও ৮০ হাজার টাকা বেশি আয় করবেন বলে আশা করছেন।
তিনি বলেন, এ মৌসুমে ভুট্টার ফলন গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম ছিল। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা থাকায় ফলন বেশি হয়েছে ।
মাদার তলা গ্রামের কৃষক শাফায়েত হোসেন (৪৫) জানান, এক একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে গত বছর ১ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। এবার আরও ৭৫ হাজার টাকা বেশি আয় হবে বলে আশা করছেন।
কচুয়া, গজালিয়া, বাধাল, ভাষা, সাইনবোর্ড বাজারসহ বাগেরহাটের ফতেপুর, যাত্রাপুর,পার্শ্ববর্তী উপজেলা নাজিরপুর, বাবুরহাট, খেজুর তলা বাজারে মণ হিসেবে ভুট্টা বিক্রি করেন চাষিরা। অনেকে বাড়িতে এসেও কিনে নেন। ভুট্টা তোলার একমাস থেকে ১৫ দিন আগে গাছের সবুজ পাতা গোখাদ্য হিসেবে খামারি গৃহস্থরা ক্ষেত থেকেই কিনে নেন। ভুট্টার অবশিষ্টাংশ বলতে কোন কিছুই অবিক্রীত থাকে না। এলাকাবাসী জ্বালানি হিসেবে শুকনা ভুট্টা গাছ কিনে নেয়।
গজালিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি সাহা বাসসকে জানান, এবার সরকারিভাবে ভুট্টা চাষের জন্য প্রণোদনা পাওয়া যায়নি। কিন্তু উপজেলা পরিষদ থেকে ১২০ জন কৃষককে বীজ সহায়তা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও এলাকায় ভুট্টার ব্যাপক চাষ হয়েছে। ভুট্টার আবাদ থেকে ফলন হওয়া পর্যন্ত কৃষি বিভাগ সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে ।
কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী বাসসকে জানান, ভুট্টা চাষে ধানের চেয়ে সেচ কম লাগে। গত বছর কচুয়া উপজেলায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার ভুট্টা বিক্রি হয়েছে। এ মৌসুমে তা সাড়ে ৪ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।