ঢাকা,২৩ জুন,২০২৫(বাসস) : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ঢাকা শহরের পরিবেশ উন্নয়ন ও সবুজায়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও বন অধিদপ্তর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় পরিবেশ বান্ধব অবকাঠামো গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, এই যৌথ উদ্যোগে ডিএনসিসির আওতাধীন সড়ক বিভাজক (মিডিয়ান),ফুটপাথ,খাল ও জলাশয়ের পাড় এবং অন্যান্য বনায়নযোগ্য স্থানে উপযুক্ত প্রজাতির উদ্ভিদ দিয়ে বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে নগরের বায়ু,পানি ও শব্দ নিয়ন্ত্রণ,তাপমাত্রা হ্রাস,ল্যান্ডস্কেপ উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলা।
সচিবালয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয় আজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আরও জানান,দেশের বায়ুদূষণ,শব্দদূষণ,নদীদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্নমুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে কিছু দৃশ্যমান কাজ হয়েছে। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত যানবাহনের মধ্য দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত কালো ধোঁয়া নির্গমন,বায়ুদূষণকারী অবৈধ ইটভাটা,স্টিল মিল,শব্দ দূষণ,ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য নির্গমন,কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা,সীসা বা ব্যাটারি রি-সাইক্লিং,কারখানা,জলাশয় ভরাট,টায়ার পাইরোলাইসিস, চারকোল কারখানাকে জরিমানা হয়েছে। খোলা অবস্থায় নির্মাণসামগ্রী রেখে বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে মোট ১ হাজার ৬৩ টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে ২ হাজার ৪৯৯ টি মামলার মাধ্যমে ২৫ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, একইসাথে ৪৮১ টি ইটভাটার চিমনি ভাঙাসহ সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়, ২১৬ টি ইটভাটা বন্ধের জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) বাস্তবায়নে নেওয়া হয়েছে নতুন কর্মপরিকল্পনা।
উপদেষ্টা বলেন,পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা ও বনসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত পরিচালিত ৪৩৪টি মোবাইল কোর্ট অভিযানে ৮১৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ২ লাখ ৩৩ হাজার কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। বনভূমি রক্ষায় ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ১ হাজার ৭১৭ একর বনভূমি দখলমুক্ত করে বন বিভাগের আওতায় আনা হয়েছে; সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পের নামে দেওয়া বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে; মীরসরাইয়ে বেজাকে দেওয়া ৪ হাজার ১০৪ একর জমি পুনরুদ্ধারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ১৯৯৫-৯৬ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ৪ লাখ ২৬ হাজার ৮৪২ হেক্টর ব্লক বাগান, ৭২ হাজার ৫৮১ কি.মি. স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং ২০ কোটি ৬২ লাখ চারা রোপণ ও বিতরণ করা হয়েছে। সামাজিক বনায়নের ২ লাখ ৫০ হাজার উপকারভোগীর মধ্যে ৫০৫ কোটি টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়েছে। হাতি, শকুন, শাপলাপাতা মাছ, পরিযায়ী পাখি, হাঙর, ডলফিন, ঘড়িয়াল সংরক্ষণ কার্যক্রম চালু আছে। হালনাগাদ করা হয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, বাতিল করা হয়েছে মৌলভীবাজারের লাঠি টিলায় সাফারি পার্ক প্রকল্প এবং পূর্বাচল এলাকায় ঘোষণা করা হয়েছে জীববৈচিত্র্য অঞ্চল।