ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : অস্ট্রেলিয়ার দ্বীপে সুদীর্ঘ ৫২৯ দিনের দুঃসাহসিক অভিযানের পর অবশেষে ভ্যালেরি নামের একটি ছোট আকারের সসেজ কুকুর উদ্ধার হয়েছে। সে অস্ট্রেলিয়ার একটি দ্বীপে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, যেখানে ক্যাঙারু, পোসাম, কোয়ালা ও পেঙ্গুইনের আনাগোনা রয়েছে।
সিডনি থেকে এএফপি জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙারু আইল্যান্ডে ছোট্ট এই ডাকশুন্ড জাতের কুকুরটি অনুসন্ধানকারীদের ফাঁকি দিয়ে চলেছিল। মাঝেমধ্যে রাতের ক্যামেরায় তার গোলাপি রঙের ঝাপসা ছবি ধরা পড়ত।
শুক্রবার রাতের দিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ক্যাঙ্গালা ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ জানিয়েছে, ‘ভ্যালেরিকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে এবং সে সুস্থ আছে।’
সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরও জানায়, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গভীর স্বস্তি বোধ করছি যে ভ্যালেরি শেষ পর্যন্ত নিরাপদ আছে এবং তার ভালোবাসার পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারছে।’
ভ্যালেরি তার মালিক জর্জিয়া গার্ডনার এবং তার সঙ্গী জশ ফিশলকের সঙ্গে ক্যাম্পিং সফরের সময় খাঁচা থেকে পালিয়ে ঝোপঝাড়ে ঢুকে পড়ে।
চেষ্টা সত্ত্বেও কয়েকদিনের মধ্যে তাকে খুঁজে না পেয়ে তার মালিকরা আশা ছেড়ে দেন। দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৪,৪০০ বর্গকিলোমিটার (১,৭০০ বর্গমাইল), যেখানে রয়েছে খামার, প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকা ও খাড়া পাহাড়ি উপকূল।
এরপর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার কোনো সন্ধান মেলেনি। অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো সে আর বেঁচে নেই।
কিন্তু পরে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং ভিডিও নজরদারি তাকে দেখতে পান। তখন স্বেচ্ছাসেবকেরা ধৈর্যের সঙ্গে তাকে ধরার অভিযান শুরু করেন। তবে সে মানুষ এবং গাড়ি দেখলে পালিয়ে যেত।
গত মাসে বন্যপ্রাণী উদ্ধারকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘ভ্যালেরিকে ফাঁদে ফেলা অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।’
ভ্যালেরিকে ধরতে স্বেচ্ছাসেবকেরা এক হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করেন, পাঁচ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দেন এবং ক্যামেরা, ফাঁদ ও খাবার (প্রলোভন হিসেবে) ব্যবহার করেন।
নিয়মিত অনলাইন আপডেটে জানানো হতো যে তারা ধীরে ধীরে তার কাছে পৌঁছাতে পারছেন।
কালো-সাদা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ভ্যালেরি প্রায়ই একটি ফাঁদ এলাকায় আসে। সেখানে একটি কুকুরের খাঁচা, কম্বল ও খেলনা রাখা ছিল- যদিও ওই জায়গাটি পোসামদেরও আকৃষ্ট করেছিল।
অবশেষে, মালিক জর্জিয়ার পরা একটি জামার ছেঁড়া টুকরোর গন্ধের টানে ভ্যালেরি খাঁচায় প্রবেশ করে। ক্যাঙ্গালা সংস্থার পরিচালক জ্যারেড এবং লিসা কারান এক ভিডিও আপডেটে এ তথ্য জানান।
জ্যারেড বলেন, ‘সে এখানে-সেখানে খাবারের খোঁজ করছিল। তারপর একেবারে পেছনের কোণে চলে যায়, যেখানে আমরা চেয়েছিলাম। আমি বোতাম চাপি, আর নির্ভুলভাবে কাজ হয়: দূরনিয়ন্ত্রিত দরজা পড়ে যায় এবং খাঁচা বন্ধ হয়ে যায়।’
পালিয়ে বেড়ানো এই চারপেয়ে শিল্পী নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিল। লিসা কারান খাঁচার ওপর দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন, যেন পাশের দরজা খুলতে না হয়।
জ্যারেড বলেন, ‘সেই সসেজ কুকুর আবার আমাদের ফাঁকি দিক তা আমরা কোনোভাবেই চাচ্ছিলাম না।’
বুনো পরিবেশ থেকে ‘সভ্য’ দুনিয়ায় ফিরে আসার পর ভ্যালেরিকে কুকুরের খাবার ও তার প্রিয় রোস্ট চিকেন খাওয়ানো হয়।
ভ্যালেরির আকার নিয়ে জ্যারেড বলেন, ‘ক্যামেরায় তাকে অনেক বড় দেখায়। কিন্তু বাস্তবে সে খুবই ছোট। পেটের নিচে মাত্র এক ইঞ্চি ফাঁক আছে, ছোট্ট ছোট্ট পা।’
আমেরিকান কেনেল ক্লাবের মতে, ডাকশুন্ড প্রজাতির কুকুররা ‘যেকোনো অভিযানের জন্য প্রস্তুত।’ বিপজ্জনক শিকারের জন্য স্বতন্ত্র শিকারি হিসেবে গড়ে ওঠায় তারা সাহসী, এমনকি কখনো কখনো বেপরোয়া এবং কিছুটা একগুঁয়েও হয়ে থাকে।
ভ্যালেরির মালিক গার্ডনার সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, যারা তার কুকুরকে খুঁজে পেতে সহায়তা করেছেন তাদের প্রতি তিনি ‘অসীম কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও লেখেন, ‘যারা কখনো তাদের পোষা প্রাণী হারিয়েছেন, তাদের অনুভূতি একেবারে স্বাভাবিক- কখনো আশা হারাবেন না।’