ঢাকা, ৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্স বুধবার বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে দক্ষিণ আমেরিকার চারটি দেশের সঙ্গে করা মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ‘দ্রুত’ অনুমোদন করা উচিত। এই চুক্তির বিরোধিতায় যদিও ফ্রান্স প্রথম থেকেই কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, ২৫ বছর ধরে আলোচনার পর ইউরোপীয় কমিশন গত ডিসেম্বরে চুক্তিটি সম্পন্ন করে, যার মাধ্যমে ৭০০ মিলিয়ন ভোক্তার জন্য একটি মুক্তবাণিজ্য এলাকা গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনো এটি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকার ও ইউরোপীয় সংসদের অনুমোদনের অপেক্ষায়।
জার্মানি, স্পেন, পর্তুগালসহ কয়েকটি দেশ চুক্তিটিকে স্বাগত জানালেও ফ্রান্স শুরু থেকেই বলছে, চুক্তিটি বর্তমান রূপে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।
ইইউ কর্মকর্তারা আশাবাদী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা শুল্ক নীতির প্রেক্ষাপটে মার্কোসুর চুক্তিটি নতুন গতি পেতে পারে।
ফ্রান্স সফরে এসে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্স বলেন, “মার্কোসুর চুক্তি দ্রুত অনুমোদিত ও বাস্তবায়িত হওয়া উচিত।”
তবে ফ্রান্স এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত দেয়নি যে, তারা আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়েকে নিয়ে গঠিত মার্কোসুর জোটের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে শুরু করেছে।
প্যারিসের আশঙ্কা, এই চুক্তি কার্যকর হলে সস্তা দামে দক্ষিণ আমেরিকার কৃষিপণ্য ইউরোপে ঢুকে ইউরোপীয় কৃষকদের প্রতিযোগিতায় ফেলবে।
এই চুক্তি অনুমোদনের জন্য ইইউ-র অন্তত ১৫টি সদস্য দেশের সমর্থন প্রয়োজন, যারা মিলিয়ে ইউরোপীয় জনসংখ্যার কমপক্ষে ৬৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন একদিকে বহুপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তির পক্ষে থাকলেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ ও কৃষি খাত রক্ষার প্রয়োজনে অনেক সময় চুক্তির বাস্তবায়নে গতি আনতে পারে না। মার্কোসুর চুক্তি তার বড় উদাহরণ।
ফ্রান্সের মতো দেশগুলো কৃষকদের ক্ষোভের মুখে চুক্তি বিলম্বিত করে, যেখানে জার্মানির মতো শিল্পনির্ভর অর্থনীতিগুলো দ্রুত চুক্তির পক্ষে।
ফ্রিডরিশ মার্স চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ফ্রান্সে গিয়ে যেভাবে মার্কোসুর চুক্তির পক্ষে সাফ বক্তব্য দিলেন, তা ইউরোপের বাণিজ্যনীতিতে জার্মান নেতৃত্বের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
এটি শুধু অর্থনৈতিক কৌশল নয়, বরং ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির প্রেক্ষাপটে নতুন কূটনৈতিক ভারসাম্য গঠনেরও অংশ।
ফ্রান্সে কৃষকরা বরাবরই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। সস্তা আমদানির আশঙ্কায় তারা বিক্ষোভ করে, যা সরকারকে বাণিজ্যচুক্তির বিরোধিতা করতে বাধ্য করে। ফলে আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো অনেক সময় দেশের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির মাঝে পড়ে জটিলতা তৈরি করে।