ঢাকা, ১০ মে, ২০২৫ (বাসস) : ওমানে রোববার ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন এক দফা পারমাণবিক আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। এর ঠিক আগেই যুক্তরাষ্ট্রের আলোচক ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ স্টিভ উইটকফ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘রেড লাইন’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, এই আলোচনার সময়সূচি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন—তিনটি উপসাগরীয় আরব রাজ্যে সফরকালে ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি অর্জনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি, যাতে করে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরাইলের সম্ভাব্য সামরিক অভিযান ঠেকানো যায়।
ওমান ও রোমে অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী তিন দফা আলোচনা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে শেষ হলেও তা মূল প্রযুক্তিগত প্রশ্নে গড়ায়নি। ফলে এখনও মৌলিক অনেক বিষয় অনির্ধারিত রয়ে গেছে।
প্রথমে উইটকফ স্বল্পমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি মানবিক প্রয়োজনে সীমিতভাবে মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও, শুক্রবার ব্রেইটবার্ট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'ইরান রাষ্ট্রে কোনো ধরনের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি আর কখনো চলতে দেওয়া হবে না। এটাই আমাদের রেড লাইন।'
তিনি বলেন, এর অর্থ হচ্ছে অস্ত্রায়নের সম্ভাবনা দূর করা, এবং ইরানের তিনটি প্রধান সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা- নাতাঞ্জ, ফোর্দো ও ইসফাহান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইরান যদি বেসামরিক চাহিদার জন্য ইউরেনিয়াম ব্যবহার করতে চায়, তাহলে সেটা কেবল আমদানির মাধ্যমেই হতে পারে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন, যার আওতায় ইরানকে স্বল্পমাত্রায় সমৃদ্ধকরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, ইরান স্বেচ্ছায় তার পুরো পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করে দেবে—এমনটি খুব কমই বিশ্বাসযোগ্য। তবুও সম্প্রতি ইরানের অবস্থান দুর্বল হয়েছে।
ইসরাইল হিজবুল্লাহকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যারা ইরানের অন্যতম মিত্র। অন্যদিকে, ইরানের প্রধান আঞ্চলিক সহযোগী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত হন।
অক্টোবর ৭, ২০২৩-এ হামাস কর্তৃক ইসরাইলে চালানো হামলার পর দুই দেশ সরাসরি সংঘাতে জড়ালে ইসরাইল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়ও হামলা চালায়।
‘ভদ্রভাবে উড়িয়ে দাও, নয়তো নিষ্ঠুরভাবে’
নিজের নীতিগত দ্বন্দ্ব স্বীকার করে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি কূটনীতির মাধ্যমে 'সম্পূর্ণ যাচাইযোগ্য' একটি নিষ্পত্তি চান। রেডিও উপস্থাপক হিউ হিউইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, 'আমার চুক্তি করতেই বেশি পছন্দ। বিকল্প মাত্র দুটো—ভদ্রভাবে উড়িয়ে দাও, নয়তো নিষ্ঠুরভাবে।'
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানান, ওমান উভয় পক্ষকে রোববার আলোচনার তারিখ প্রস্তাব করে এবং উভয়েই তা গ্রহণ করে।
তার ভাষায়, 'আলোচনার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পরামর্শ ও বিশ্লেষণের প্রয়োজনও বাড়ে। তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা সামনে এগোচ্ছি এবং ধীরে ধীরে বিস্তারিত বিষয়ে প্রবেশ করছি।'
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে চীনের একটি তেল শোধনাগার—ইরানি তেলের প্রধান বাজার। ওবামা-চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে আসার পর যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোকে ইরানি তেল কেনা থেকেও বিরত রাখতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে।