ঢাকা ১৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে অভিযান চালানোর পর গতকাল সোমবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশটির স্থানীয় সময় রাত ৮টায় দেওয়া ভাষণে মোদি বলেছেন, পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার ব্লাকমেইলে ভীত হবে না ভারত।
নয়াদিল্লি থেকে এএফপি এই খবর জানায়।
মোদি বলেছেন, আমরা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ও সেনা পরিকাঠামোর ওপর যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, তা এখন শুধু স্থগিত রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে পাকিস্তানের প্রতিটি পদক্ষেপ মাপা হবে। ভারতের তিন সেনা, বিএসএফ সতর্ক আছে।
পাকিস্তানকে সতর্ক করে মোদি বলেছেন, ভারতের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হলেই উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। নিজের শর্তে, নিজস্ব পথে সেই জবাব দেওয়া হবে। কঠোর জবাব দেওয়া হবে। কোনো ধরনের পরমাণু ব্ল্যাকমেইল ভারত সহ্য করবে না। পরমাণু ব্ল্যাকমেইলের আড়ালে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলবে না। আমরা সন্ত্রাসবাদীদের ঠিকানায় গিয়ে মারব। সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সরকারকে আলাদা করে দেখবো না।
এছাড়া মোদি বলেছেন, ভারতের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেবো। যুদ্ধের ময়দানে আমরা বারবার পাকিস্তানকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি। নিউ এজ ওয়ারফেয়ারেও শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছি। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্রের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২১ শতকের যুদ্ধে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্র সফল হয়েছে।
‘এই যুগ যুদ্ধের নয়, এই যুগ সন্ত্রাসবাদেরও নয়। পাকিস্তানি সেনা, সরকার যেভাবে সন্ত্রাসবীদকে সার ও খাবার দিচ্ছে, একদিন তা পাকিস্তানকেই শেষ করে দেবে। পাকিস্তানকে বাঁচতে গেলে নিজের সন্ত্রাস পরিকাঠামো শেষ করতে হবে। না হলে, শান্তির কোনো রাস্তা থাকবে না। ভারতের মত স্পষ্ট- সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে হবে না, সন্ত্রাস আর বাণিজ্যও একসঙ্গে হয় না। পানি ও রক্ত একসঙ্গে বইবে না, ‘ভাষণে এমন কথা বলেন তিনি।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোন কোন বিষয়ে কথা হবে তা জানাতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘বিশ্বকে বলছি, আমাদের ঘোষিত নীতি হলো, পাকিস্তানের সঙ্গে কথা হলে, সন্ত্রাসবাীদের বিষয়ে হবে, পাকিস্তান অধিকৃতক কাশ্মীর নিয়ে হবে।
পেহেলগ্রাম প্রসঙ্গও উঠে আসে মোদির ভাষণে। তিনি বলেছেন, পেহেলগামে সন্ত্রাসবাদীরা যে বর্বরতা দেখিয়েছে, তাতে দেশ ও দুনিয়া চমকে গিয়েছিল। ছুটি কাটাতে যাওয়া মানুষকে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে পরিবারের সামনে, বাচ্চাদের সামনে হত্যা করা হয়েছে। এই আতঙ্কের বীভৎস চেহারা ও ক্রুরতার মাধ্যমে দেশের সদ্ভাবকে ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। এরপর সারা দেশ, সব নাগরিক, সব সমাজ, বর্গ, রাজনৈতিক দল একসুরে আতঙ্কের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলে। আমরা সন্ত্রাসবাদীদের মাটিতে মেশানোর জন্য সেনাকে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে বলি। সন্ত্রাসবাদীরা স্বপ্নেও ভাবেনি, ভারত এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একশ’র বেশি জঙ্গি মারা গেছে। গত তিন দশক ধরে যারা পাকিস্তানে ঘুরছিল, চক্রান্ত করছিল, ভারত এক ঝটকায় তাদের খতম করে দিয়েছে।
মোদি আরো বলেছেন, গোটা দুনিয়া দেখেছে, কেমনভাবে পাক ড্রোন, মিসাইল ভারতের সামনে তিরবিদ্ধ হয়েছে। সশস্ত্র এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আকাশেই সব নষ্ট করে দিয়েছে। ভারত পাকিস্তানের বুকে আঘাত করেছে। ভারতের ড্রোন, মিসাইল ঠিক টার্গেটে হামলা করেছে। বিমানমবাহিনীর ঘাঁটিতে এমন আঘাত করা হয়েছে যা তারা ভাবতে পারেনি। পাকিস্তান বাধ্য হয়ে ১০ মে দুপুর বেলায় আমাদের ডিজিএমও-র সঙ্গে যোগাযোগ করে। যখন আমাদেও বলা হলো, তারা ভবিষ্যতে কোনো সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড করবে না, সামরিক দুঃসাহস দেখানো হবে না, তখন ভারত তার উপর বিচার করে।