ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : ফ্রিজ ছাড়াই যেন টরটিলা অনেকদিন ভালো থাকে- এই চিন্তা থেকেই নতুন ধরনের টরটিলা বানিয়েছেন মেক্সিকোর একদল বিজ্ঞানী। এতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রোবায়োটিক, যা পুষ্টি বাড়ানোর পাশাপাশি খাবার সংরক্ষণেও সহায়ক।
মেক্সিকো সিটি থেকে এএফপি জানায়, টরটিলা মেক্সিকোর সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলোর একটি। প্রতিদিন লাখো মানুষ ট্যাকোসহ নানা খাবারে এটি খায়। সাধারণত কর্ন টরটিলা বেশি খাওয়া হয় এবং মানুষ তা কিনে আনে স্থানীয় দোকান থেকে।
তবে রাজধানী মেক্সিকো সিটির জাতীয় স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএনএএম) অধ্যাপক রাকেল গোমেজ ও তার গবেষণা দল গমের ময়দা দিয়ে এক ধরনের টরটিলা তৈরি করেছেন যাতে প্রোবায়োটিক জীবাণু রয়েছে। এসব জীবাণু দই ও অন্যান্য ফারমেন্ট করা খাবারেও পাওয়া যায়।
এই টরটিলা রেফ্রিজারেটর ছাড়াই এক মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। গোমেজ বলেন, ‘আমরা মূলত দরিদ্র, প্রান্তিক মানুষদের কথা ভেবেই এটি বানিয়েছি।’
সরকারি হিসাবে দেখা গেছে, মেক্সিকোয় পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের প্রায় ১৪ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টিতে ভুগছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার আরও বেশি—প্রায় ২৭ শতাংশ।
ফ্রিজ নেই, পুরানো পদ্ধতিই ভরসা
গোমেজের তৈরি টরটিলা এখনও বাজারে আসেনি, তবে এটি কাজে লাগতে পারে চিয়াপাস রাজ্যের অকচুক শহরের বাসিন্দা টেরেসা সানচেজের মতো মানুষের জন্য। ৪৬ বছর বয়সী এই নারী কাঠের ঘরে থাকেন, রান্না করেন জ্বালানি কাঠে।
ফ্রিজ নেই তার ঘরে, নেই আশপাশের অনেকেরও। তাই পূর্বপুরুষদের শেখানো কায়দাতেই খাবার সংরক্ষণ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার মা যেমন শিখিয়েছেন, দাদা-দাদিও সেইভাবেই করতেন।’ তিনি জানান, পরিবারের সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী খাবার রান্না করেন। কিছু বাঁচলে তা আবার গরম করে খান। মাংস শুকিয়ে রাখতে রোদে দেন বা লবণ মাখান।
টরটিলা রাখেন গাছের ছাল দিয়ে বানানো পাত্রে। বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ীই কেনাকাটা করি। তেমন টাকা-পয়সা তো নেই।’
চিয়াপাস রাজ্যে মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের ঘরে ফ্রিজ আছে, যা মেক্সিকোর ৩২টি রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এ অঞ্চলের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৩০.১ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতেও রয়েছে রাজ্যটির অর্ধেক এলাকা।
রসায়ন ছাড়াই সংরক্ষণ
গোমেজ জানান, এই টরটিলায় কোনো কৃত্রিম সংরক্ষণকারী নেই। ফারমেন্ট করা উপাদান থেকেই তা দীর্ঘদিন ভালো থাকে। এতে ব্যবহৃত প্রিবায়োটিক উপাদানগুলো প্রোবায়োটিক জীবাণুর জন্য খাবার হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের উপকারে আসে এমন কিছু যৌগ তৈরি করে।
এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব সোনোরার গবেষক গিয়েরমো আর্তেয়াগা বলেন, বাজারের টরটিলায় সাধারণত ক্যালসিয়াম প্রোপায়োনেট ব্যবহার হয়, যা পেটের উপকারী জীবাণুর ক্ষতি করতে পারে। নতুন টরটিলাটি সে ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করবে।
গোমেজের টরটিলা গমের তৈরি, যা মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলে বেশি জনপ্রিয়। তবে তিনি কর্ন টরটিলার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি প্রয়োগের কথা ভাবছেন, যেহেতু কর্ন টরটিলা বেশি খাওয়া হয় কিন্তু তা সহজে নষ্ট হয়ে যায়।
২০২৩ সালে টরটিলার পেটেন্ট করা হয়। পরে ইউএনএএম এক কোম্পানির সঙ্গে বাজারজাত করার জন্য চুক্তি করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে গোমেজ এখনও আশা করছেন, একদিন তা বাজারে আসবে।
তিনি বলেন, ‘ল্যাবে বানানো হলেও এটা যে সুস্বাদু, তাতে আমি নিশ্চিত।’