ঢাকা, ১৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : বিরল এক জিনগত রোগে আক্রান্ত এক মার্কিন শিশু ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একেবারে তার জন্য তৈরি করা জিন শুধরানোর চিকিৎসা পেয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, এই সাফল্য ভবিষ্যতে আরও অনেক দুর্লভ রোগের জন্য আশার নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, এই শিশুটির নাম কে.জে. মালডুন। বয়স সবে সাড়ে নয় মাস। গোলগাল গাল আর নীলচে চোখের এই শিশুটির জন্মের পরপরই তার সিপিএস১ ঘাটতি নামে এক মারাত্মক রোগ ধরা পড়ে।
এই রোগ হয় যকৃতের জন্য প্রয়োজনীয় এক উৎসেচক তৈরিতে জিনগত ত্রুটির কারণে। এতে দেহের বিপাকক্রিয়ায় তৈরি হওয়া কিছু বিষাক্ত বর্জ্য শরীর থেকে বের হয় না।
শিশুটির মা নিকোল মালডুন বলেন, 'আপনি যদি গুগলে ‘সিপিএস১ ঘাটতি’ খোঁজেন, তাহলে দেখবেন হয় মৃত্যু নয়তো যকৃত প্রতিস্থাপনই একমাত্র পথ।'
এই দুঃসময়ে চিকিৎসকরা একটি একেবারে নতুন ও আগে কখনও প্রয়োগ না করা চিকিৎসা পদ্ধতির প্রস্তাব দেন। সেটি হলো: শিশুটির জন্য বিশেষভাবে তৈরি জিনগত ত্রুটি শুধরানোর ওষুধ, যা ব্যবহার করে দেহের জিনের ত্রুটিপূর্ণ অংশ কেটে-ছেঁটে ঠিক করা হয়। এই পদ্ধতির নাম ক্রিসপার-ক্যাস৯, যা ২০২০ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতে নেয়।
শিশুটির বাবা কাইল মালডুন বলেন, 'আমাদের সন্তানের অবস্থা গুরুতর। হয় তার যকৃত প্রতিস্থাপন করতে হবে, নয়তো একেবারে নতুন এমন ওষুধ দিতে হবে, যা আগে কারও ওপর প্রয়োগই করা হয়নি।'
শেষ পর্যন্ত তারা সম্মতি দেন। শিশুটির শরীরে দেওয়া হয় বিশেষভাবে তার জন্য তৈরি এক ইনফিউশন বা তরল ওষুধ, যা দেহে গিয়ে সমস্যা তৈরি করা ডিএনএ'র ভুল বর্ণগুলো ঠিক করে দেয়।
চিকিৎসক রেবেকা আরেনস-নিকলাস জানান, 'এই ওষুধ কেবল কে.জের জন্যই তৈরি। তার জিনগত সমস্যাগুলো একান্তই তার নিজস্ব। এ একেবারে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা।'
ওষুধটি যকৃতে পৌঁছার পর সেটির ভেতরে থাকা ‘আণবিক কাঁচি’ কোষে প্রবেশ করে এবং ত্রুটিপূর্ণ জিন কাটছাঁট করে ঠিকঠাক করে দেয়।
চিকিৎসকরা জানান, পরীক্ষার ফলাফল আশাব্যঞ্জক। এখন কে.জে. তুলনামূলক বেশি প্রোটিন খেতে পারছে, যেটা আগে সম্ভব ছিল না। আগের মতো এত ওষুধও তাকে নিতে হচ্ছে না।
তবে চিকিৎসার দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিশুটিকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে বলে জানান তারা।
ডা. আরেনস-নিকলাস আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, 'আমরা চাই, ভবিষ্যতে আরও অনেক শিশু এই পদ্ধতির মাধ্যমে উপকার পাক। এটি ব্যক্তির জিনগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়ার নতুন এক দিগন্ত।'