ঢাকা, ১৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : ব্রেক্সিটের পর এই প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের আতিথেয়তা দিতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। সোমবারের এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্দেশ্যেই আলোচনার টেবিলে বসছে লন্ডন ও ব্রাসেলস।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো আলোচনা চলছে। কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
প্রতিরক্ষা চুক্তি:
সম্মেলনের প্রধান অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পটভূমিতে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য অনিশ্চিত অবস্থানের প্রেক্ষিতে ইউরোপ এখন সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগে ব্যস্ত। এই প্রেক্ষাপটে ব্রিটেনকেও অংশীদার হিসেবে দেখতে চায় ব্রাসেলস।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য নির্দিষ্ট কিছু ইউরোপীয় সামরিক বৈঠকে অংশ নিতে পারবে এবং সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করতে পারবে। একইসঙ্গে ইউরোপের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগে ব্রিটিশ কোম্পানি যেমন বিএই সিস্টেমস এবং রোলস-রয়েসকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে।
চুক্তিটি কার্যকর হলে ব্রিটেন ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর প্রতিরক্ষা তহবিলেও প্রবেশাধিকার পেতে পারে। তবে পূর্ণ সুবিধা পেতে হলে আলাদা আরেকটি চুক্তি প্রয়োজন হবে।
মাছ ধরা নিয়ে দ্বন্দ্ব
এই আলোচনায় কূটনৈতিক জটিলতা বাড়াচ্ছে মাছ ধরার বিষয়টি। ফ্রান্সসহ কিছু ইউরোপীয় দেশ চায়, নিরাপত্তা চুক্তির বিনিময়ে ব্রিটিশ জলসীমায় ইউরোপীয় মাছ ধরার নৌকাগুলোর প্রবেশাধিকারও নবায়ন হোক।
তবে ইউরোপীয় পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাস ইতিমধ্যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, মাছ সংক্রান্ত চুক্তি না হলেও নিরাপত্তা চুক্তি সম্পাদন সম্ভব।
বর্তমান পাঁচ বছরের মাছ ধরার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। ইউরোপীয় দেশগুলো তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নের পক্ষে, শর্ত হিসেবে ব্রিটেনের খাদ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কাগজপত্র সংক্রান্ত জটিলতা কমানোর দাবি জানানো হয়েছে।
ব্রিটেন আপাতত চার বছরের প্রবেশাধিকার দিতে আগ্রহী, যা ইউরোপের প্রত্যাশার তুলনায় কম—ফলে খাদ্য রপ্তানি সংক্রান্ত ছাড়ের বিষয়টি এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
মানসম্পর্কিত বিধিনিষেধ:
স্টারমার ইঙ্গিত দিয়েছেন, কৃষিপণ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত মানদণ্ডে ইউরোপের সঙ্গে ‘ডাইনামিক অ্যালাইনমেন্ট’ মানতে প্রস্তুত যুক্তরাজ্য। এর ফলে পণ্যের মান যাচাইয়ের জটিলতা কমবে এবং বাণিজ্য সহজ হবে।
তিনি বলেন, “ব্রিটিশরা নিজেদের উচ্চ মানসম্পন্ন পণ্যের জন্য গর্বিত—আমরাও সেই মান বজায় রাখতে চাই।”
এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় আদালতের ভূমিকা স্বীকার করেও তিনি বলেন, ইতোমধ্যে উত্তর আয়ারল্যান্ড বিষয়ক চুক্তিতে ওই আদালত সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দায়িত্ব পালন করছে।
তরুণদের বিনিময় কর্মসূচি:
মাছের পাশাপাশি সম্মেলনের আরেকটি বিতর্কিত বিষয় হলো তরুণদের জন্য বিনিময় কর্মসূচি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বছর ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের পড়াশোনা ও কাজের সুযোগ করে দিতে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল।
স্টারমারের সরকার শুরুতে তাতে আপত্তি জানালেও এখন নিয়ন্ত্রিত একটি কর্মসূচির কথা ভাবছে, যার ফলে অভিবাসনের সংখ্যা বাড়বে না। টাইমস পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এতে ‘একজন আসলে একজন যাবে’ এমন নীতিতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সীমিত রাখা হতে পারে। এটি সময়সীমাবদ্ধও হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন চাইছে, তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রিটিশদের সমান বিশ্ববিদ্যালয় ফি নির্ধারণ করা হোক। তবে লন্ডন তাতে সম্মত হয়নি।