ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস) : পশ্চিম তীরে সফররত বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের ঘটনায় বুধবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসরাইল-সমর্থক একাধিক দেশ। সেনারা ঘটনাটিকে ‘সতর্কতামূলক গুলি’ বলে দাবি করলেও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একে ‘ইচ্ছাকৃত হামলা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
ঘটনার বিবরণ: ফিলিস্তিনের জেনিন শহরের কাছে ওই ঘটনার সময় এএফপির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কূটনীতিক ও সাংবাদিকরা গুলির শব্দে আতঙ্কে আশ্রয় নিচ্ছেন।
ইউরোপীয় এক কূটনীতিক জানান, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরাইলের অভিযান কী পরিমাণ ধ্বংস ডেকে এনেছে তা দেখতেই তারা জেনিনে গিয়েছিলেন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, ওই কূটনৈতিক বহর অনুমোদিত পথ ছেড়ে ‘নিষিদ্ধ এলাকায়’ ঢুকে পড়ে। এ কারণে সেনারা সতর্কতামূলক গুলি ছোড়ে। তারা স্বীকার করেছে যে এতে ‘অসুবিধা’ হয়েছে এবং এ জন্য ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেছে, তবে কেউ আহত হয়নি বলেও জানিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া: জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক বলেন, 'কূটনীতিকদের ওপর গুলি চালানো—সতর্কতামূলক হোক বা যেভাবেই হোক—একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তাদের নিরাপত্তাকে সবসময় সম্মান করা উচিত।'
বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কালাস ইসরাইলর কাছে দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান।
নিন্দা জানায় যেসব দেশ: বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন ও উরুগুয়ে—ইসরাইলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে বা করবে বলে জানিয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি ঘটনাটিকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যার দাবি জানান।
মিসর একে ‘সব কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছে।
তুরস্ক ঘটনার তাৎক্ষণিক তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া: ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আহমদ আল-দিক, যিনি কূটনৈতিক দলটির সঙ্গে ছিলেন, বলেন,
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এই বেপরোয়া আচরণ কূটনীতিকদের কাছে ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছে।'
ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, সফররত কূটনীতিকরা ২০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে ব্রিটেন, চীন, মিসর, ফ্রান্স, জাপান, জর্ডান, তুরস্ক ও রাশিয়া।
জাপান নিশ্চিত করেছে যে তাদের কূটনৈতিক কর্মকর্তারাও সেখানে ছিলেন এবং এ ঘটনায় তারা ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছে।
জাপানের প্রতিবাদ: টোকিওতে সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, 'জাপান ইসরাইলের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ঘটনার ব্যাখ্যা ও ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।'
গাজায় মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক চাপ:
এই ঘটনার সময়ই গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ বাড়ছে। টানা অবরোধের পর ইসরাইল সম্প্রতি কিছুটা ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলেও পরিস্থিতি রয়ে গেছে ভয়াবহ।
ইইউ মঙ্গলবার ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়।
সুইডেন ইসরাইলের মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে চাপ দেবে বলে জানিয়েছে।
ব্রিটেন ইসরাইলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে এবং রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে।
পোপ চতুর্দশ লিও গাজার পরিস্থিতিকে ‘বেদনাদায়ক ও উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহের আহ্বান জানান।
গাজা যুদ্ধের হালনাগাদ তথ্য:
হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরাইলে ১,২১৮ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়, যার মধ্যে ৫৭ জন এখনও গাজায় আটক এবং ৩৪ জন মৃত বলে দাবি করছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরাইল ফের হামলা শুরুর পর থেকে অন্তত ৩,৫০৯ জন নিহত হয়েছে।
মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩,৬৫৫ জন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।