ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস) : লন্ডনের হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে মরিশাসের চুক্তিটি পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছে, যার মাধ্যমে প্রত্যন্ত চাগোস দ্বীপপুঞ্জ মরিশাসকে ফেরত দেওয়ার কথা। আদালত শেষ মুহূর্তে এই চুক্তিতে স্থগিতাদেশ জারি করে।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, আদালতের এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, 'রাতের বেলায় একটি জরুরি শুনানি হয় এবং আজ সকাল ১০:৩০টা (০৯:৩০ জিএমটি) পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করা হয়, এর মধ্যে আরও একটি শুনানি হবে।'
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বৃহস্পতিবার সকালে মরিশাসের প্রতিনিধিদের সাথে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এই চুক্তি সই করার কথা রয়েছে।
এই চুক্তির অধীনে যুক্তরাজ্য দ্বীপপুঞ্জটি মরিশাসকে ফেরত দেবে এবং ডিয়েগো গার্সিয়ায় অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন-ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি লিজ নেওয়ার জন্য অর্থ প্রদান করবে। ডিয়েগো গার্সিয়া চাগোস দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম দ্বীপ।
রাত ২:২৫টায় (০১:২৫ জিএমটি) জারি করা আদেশে বিচারক জুলিয়ান গুজ বলেন, সরকার ' 'চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওশান টেরিটরি কোনো বিদেশি সরকারের কাছে হস্তান্তর সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত বা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক কোনো পদক্ষেপ নেবে না।'
রায়ে আরও বলা হয়েছে, সরকারকে 'পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওশান টেরিটরির ওপর যুক্তরাজ্যের এখতিয়ার বজায় রাখতে' হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, চাগোসের দুই নারী এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের আবেদন করেন।
এই ঘাঁটিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে লিজ দেওয়া হয়েছে এবং এটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় এটি দূরপাল্লার বোমারু বিমান ও জাহাজের জন্য একটি কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তবে স্টারমার বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনি রায়গুলো চাগোস দ্বীপপুঞ্জের ওপর যুক্তরাজ্যের মালিকানা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে এবং কেবল মরিশাসের সাথে একটি চুক্তিই নিশ্চিত করতে পারে যে ঘাঁটিটি কার্যকর থাকবে।
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা 'চলমান আইনি মামলাগুলো সম্পর্কে মন্তব্য করে না'। তিনি এএফপিকে বলেন, 'এই চুক্তিটি ব্রিটিশ জনগণ ও আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত।'
১৯৬০-এর দশকে মরিশাস স্বাধীনতা পাওয়ার পর যুক্তরাজ্য চাগোস দ্বীপপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে। তবে তারা হাজার হাজার চাগোস দ্বীপবাসীকে উচ্ছেদ করে, যারা এরপর ব্রিটিশ আদালতে ক্ষতিপূরণের জন্য একাধিক আইনি দাবি জানিয়েছে।
২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক আদালত দশকব্যাপী আইনি লড়াইয়ের পর যুক্তরাজ্যকে দ্বীপপুঞ্জটি মরিশাসকে ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করে।
এই চুক্তির অধীনে যুক্তরাজ্য ৯৯ বছরের জন্য ঘাঁটিটি লিজ নেবে, যার মেয়াদ বাড়ানোর বিকল্পও থাকবে।
যুক্তরাজ্য সরকার এখনও বলেনি যে লিজ বাবদ কত অর্থ প্রদান করা হবে, তবে বছরে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড (১১১ মিলিয়ন ডলার) হবে বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা তারা অস্বীকার করেনি।
মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী নবীন রামগুলাম বলেছেন, ওয়াশিংটন যদি ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সমর্থন না দেয়, তাহলে তার দেশ দ্বীপগুলোর ওপর পূর্ণ সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।