ঢাকা, ২৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠকে 'আচমকা'এক ভিডিও দেখিয়ে তাকে ‘হতচকিত’ করে দেন। ওই ভিডিওতে ট্রাম্প সাদা কৃষকদের ‘নির্যাতন’-এর অভিযোগ তুলে ধরেন, যা তিনি ‘গণহত্যা’ বলে দাবি করেন।
জোহানেসবার্গ থেকে এএফপি জানায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিকে ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের হত্যার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন। তবে এতে বেশ কিছু অসত্য তথ্য রয়েছে।
- ক্রসচিহ্ন মানেই কবরস্থান নয় -
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ঘুরপথ ধরে সারিবদ্ধভাবে স্থাপন করা সাদা ক্রস ও অসংখ্য গাড়ি।
ট্রাম্প বলেন, ‘এই জায়গাগুলো সমাধিস্থল। গাড়িগুলো থেমে আছে নিহত আত্মীয়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।’
কিন্তু এটি ২০২০ সালের একটি প্রতিবাদ কর্মসূচির ফুটেজ, যেখানে নরম্যান্ডিয়ানে এক দম্পতির খুনের পর প্রতীকী ক্রস বসানো হয়েছিল। এটি কোনো কবরস্থান নয়।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ২০২২ সালে আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়।
- ভিডিওতে থাকা রাজনীতিক সরকারে নেই -
একটি দৃশ্যে এক রাজনীতিককে বলতে দেখা যায়, ‘দক্ষিণ আফ্রিকানরা জমি দখল করে, সেটাই আমাদের পরিচয়।’
ট্রাম্প দাবি করেন, ‘এই লোকটি সরকারি কর্মকর্তা।’
তবে তিনি সরকারের কেউ নন। তিনি হলেন জুলিয়াস মালেমা, বামপন্থী বিরোধী দল ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্স (ইএফএফ)-এর নেতা। গত নির্বাচনে ইএফএফ ৯.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছিল এবং কখনোই সরকারে আসেনি।
- ‘কিল দ্য বুর’ গানটির ইতিহাস রয়েছে -
ভিডিওতে মালেমাকে ‘কিল দ্য বুর, কিল দ্য ফার্মার’ গান গাইতে দেখা যায়।
ট্রাম্পের দাবি, এটি শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান কৃষকদের হত্যার আহ্বান। তবে গানটি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সময়কার স্লোগান, যা ১৯৯৪ সালে বর্ণবৈষম্য অবসানের আগ পর্যন্ত ব্যবহার হতো।
বিভিন্ন সময়ে এটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠলেও আদালত এটিকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিবেচনার পক্ষে রায় দিয়েছে।
- ভিডিওর ছবি কঙ্গো থেকে নেওয়া -
ভিডিও দেখানোর পর ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষক হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ হিসেবে প্রিন্ট করা কয়েকটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
তাদের একটি ব্লগপোস্টে দেখা যায়, রেডক্রস কর্মীরা সাদা হ্যাজমাট স্যুট পরে মৃতদেহের ব্যাগ সামলাচ্ছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘দেখুন, এটা শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের সমাধিস্থলের ছবি।’
কিন্তু এটি কঙ্গোর গোমা শহরে এক গণকারাগার পালানোর ঘটনায় ধর্ষিত ও আগুনে পুড়িয়ে মারা নারীদের সহায়তায় রেডক্রস কর্মীদের দৃশ্য।
ছবিটি ফেব্রুয়ারির একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া, যেটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ওয়াইওন প্রকাশ করেছিল এবং যেখানে রয়টার্সের ফুটেজ ব্যবহৃত হয়েছে।
- শ্বেতাঙ্গ কৃষক ‘বহুলসংখ্যক’ খুন হন না -
ট্রাম্প দাবি করেন, ‘এদের বহু মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে,’ এবং দেখান যে হাজার হাজার শ্বেতাঙ্গ কৃষক খুন হচ্ছেন।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষক হত্যা কিছুটা ঘটলেও, তা দেশের সামগ্রিক হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে অল্পই।
আফ্রিকানার লবিগ্রুপ আফ্রিফোরাম বলছে, ২০২৩ সালে এমন ৪৯টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট ২৭,৬২১টি হত্যাকাণ্ড রেকর্ড করা হয়েছে—অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৭৫ জন খুন। এর অধিকাংশই শহরাঞ্চলের তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ।