ফ্রান্সের প্রখ্যাত ডকুমেন্টারি নির্মাতা মার্সেল ওফুলস প্রয়াত

বাসস
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ১০:০৬

ঢাকা, ২৭, মে, ২০২৫ (বাসস) : অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা মার্সেল ওফুলস পরলোক গমন করেছেন। মার্সেল তার ১৯৬৯ সালেরত চলচ্চিত্র ‘দ্য সোরো অ্যান্ড দ্য পিটি’-তে ফ্রান্সের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি অধিপতিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মিথ ভেঙে দিয়েছিলেন। সোমবার পরিবার তার মৃত্যুর খবর জানিয়েছে।

প্যারিসে এএফপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তার নাতি আন্দ্রেয়াস-বেনজামিন সেফার্ট জানিয়েছেন, বিখ্যাত জার্মান-ইহুদি পরিচালক ম্যাক্স ওফুলসের সন্তান মার্সেল ওফুলস '২৪ মে শান্তিপূর্ণভাবে মারা গেছেন।' তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।

ওফুলস ‘দ্য সোরো অ্যান্ড দ্য পিটি’ ছবির মাধ্যমে ফ্রান্সকে আন্দোলিত করেছিলেন। এটি ১৯৬৯ সালে মুক্তি পায়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভিচি সরকারের অধীনে ফ্রান্সের ক্লারমঁ ফে রাঁ শহরের নিপীড়নের সত্য তুলে ধরেছিল।

এই ছবিটি ফ্রান্সের সবচেয়ে গর্বিত মিথগুলোর একটি ভেঙে দিয়েছিল — যে ফ্রান্স ও ফরাসিরা সবসময় জার্মানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিল। ছবিটি ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ফরাসি পাবলিক টেলিভিশনে নিষিদ্ধ ছিল।

বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও সংবাদদলিলের মাধ্যমে এটি দেখায় যে, সমাজের নীচু থেকে শুরু করে উপরতলা পর্যন্ত নাৎসিদের সঙ্গে ব্যাপক সহযোগিতা ছিল।

নিজের কৃতিত্বকে ছোট করে দেখিয়েছেন ওফুলস। তিনি বলেছেন, তিনি ফ্রান্সকে বিচার করতে চাননি, এটি শুধুমাত্র টেলিভিশনের জন্য একটি কাজ ছিল।

তিনি বলেছিলেন, '৪০ বছর ধরে আমাকে বলতে হচ্ছে যে এটা একটি অভিযোগমূলক ছবি, কিন্তু এটা ফরাসিদের বিচার করার চেষ্টা করে না।'

'এই পরিস্থিতিতে আর কে বলতে পারে তার দেশ আরও ভালো আচরণ করতে পারত?' যোগ করেন তিনি।

চার ঘণ্টারও বেশি সময়ের এই চলচ্চিত্রটি এমন সময় দর্শকদের মন জয় করে, যখন ডকুমেন্টারি বড় পর্দায় খুব কম দেখানো হতো।

- নাৎসি শাসন থেকে পলায়ন -

ওফুলসের জন্ম হয়েছিল ১ নভেম্বর, ১৯২৭ সালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে। তার আসল নাম ছিল হান্স মার্সেল ওপেনহেইমার। তিনি ছিলেন জার্মান অভিনেত্রী হিলদে ওয়াল ও পরিচালক ম্যাক্স ওফুলসের সন্তান।

তিনি বাবার সঙ্গে এবং চলচ্চিত্র পরিচালক বিলি ওয়াইল্ডার ও ফ্রিটজ ল্যাংয়ের সঙ্গেও ফ্রান্সে পালিয়ে যান। পরে পিরিনিয়াস পর্বতমালা পার হয়ে ১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেন।

হলিউডে বড় হয়ে ১৯৪৬ সালে জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে (জিআই) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে ফ্রান্সে ফিরে সহকারী পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং ১৯৫৫ সালে তার পিতার শেষ ছবি ‘লোলা মন্টেস’-এ কাজ করেন।

১৯৬৩ সালে ‘বানানা স্কিন’ নামে একটি কথাসাহিত্য চলচ্চিত্রে কাজ করেন, যেখানে ছিলেন প্রধান চরিত্রে জঁ-পল বেলমন্ডো ও জঁ মোরো, কিন্তু এটি সাফল্য লাভ করতে পারেনি। এরপর ফরাসি পাবলিক টেলিভিশনের জন্য ডকুমেন্টারি নির্মাণ শুরু করেন।

১৯৮৯ সালে ‘হোটেল টার্মিনাস দ্য লাইফ অ্যান্ড টাইমস অব ক্লাউস বার্বি’ নামে ডকুমেন্টারির জন্য তিনি অস্কার অর্জন করেন।

তবে ১৯৯৪ সালে তৈরি ‘দ্য ট্রাবলস উই ভি সিন’, যা বসনিয়া যুদ্ধের প্রতিবেদন নিয়ে, ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়।

এরপর তিনি কয়েক বছর দক্ষিণ ফ্রান্সে নিভৃতে কাটান, কাজ থেকে দূরে থাকেন। ২০১৩ সালে ‘আঁ ভয়াজ্যর’ নামে একটি ভ্রমণচিত্র নিয়ে কাম ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ফিরে এসে দর্শকবর্গের মন জয় করেন।

নিজের পিতার প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, 'এটা আমাকে কাজ পেতে সাহায্য করেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, এটা আমাকে আমার সফলতা নিয়ে অহংকারী না হয়ে নম্র থাকতে শিখিয়েছে। আমি একজন প্রতিভাবান ব্যক্তির ছায়ায় জন্মেছি, যা আমাকে অহংকার থেকে বাঁচিয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পুলিশ সদস্যদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ আইজিপির
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে নিহত সৈনিকদের সমাধিতে কুটনৈতিকদের শ্রদ্ধাঞ্জলি
তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎ : চব্বিশের শহীদ পরিবার বিএনপি’র সঙ্গে কাজ করবে
ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তির অনলাইন আবেদনের সময় বাড়ল
অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজপথ আর উত্তপ্ত হতে দেব না : সালাহউদ্দিন আহমেদ
মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে খেলাধুলা : হাসনাত আব্দুল্লাহ
৭ নভেম্বর শুরু হওয়া দলকে সংস্কার শেখাতে হবে না : মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল
রাজশাহীতে আইডিইবি’র ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
আল্লামা ইকবালের ১৪৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাবি ও প্রেসক্লাবে সেমিনার
সাংবাদিকদের দলবাজি ত্যাগ করে পেশাদারিত্ব সমুন্নত রাখতে হবে : এম আবদুল্লাহ
১০