বিশ্বব্যাপী নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে রয়েছে প্রতি ৪ জনের ১ জন : জাতিসংঘ

বাসস
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৫৪

ঢাকা, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্বব্যাপী এখনও দুই বিলিয়নেরও বেশি মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত বলে মঙ্গলবার জাতিসংঘ জানিয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, সর্বজনীন কাভারেজ অর্জনের দিকে অগ্রগতি একেবারেই যথেষ্ট দ্রুতগতিতে হচ্ছে না।

জেনেভা থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।

জাতিসংঘের স্বাস্থ্য ও শিশু বিষয়ক সংস্থাগুলো বলেছে, গত বছর বিশ্বব্যাপী প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন নিরাপদভাবে পরিচালিত পানীয় জলের অভাবে ছিল। যেখানে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ এখনও পানির জন্য প্রাকৃতিক উৎস যেমন নদী, পুকুর ও খালের ওপর নির্ভরশীল ছিল ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ জানিয়েছে যে পানি, স্যানিটেশন এবং পরিছন্নতা পরিষেবার বিলম্ব কোটি কোটি মানুষকে রোগের ঝুঁকিতে ফেলেছে। তারা একটি যৌথ গবেষণায় বলেছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে এই ধরনের পরিষেবার সার্বজনীন কভারেজ অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিশ্ব এখনও অনেক দূরে রয়েছে। তারা সতর্ক করেছে যে সেই লক্ষ্য ক্রমশ নাগালের বাইরে যাচ্ছে। 

ডাব্লিউএইচও -এর পরিবেশ প্রধান রুইডিগার ক্রেচ বলেছেন,  পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি বিশেষাধিকার নয়: এগুলি মৌলিক মানবাধিকার। আমাদের অবশ্যই বিশেষ করে সবচেয়ে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জন্য পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করতে হবে।

প্রতিবেদনটিতে পানীয় জল সেবার পাঁচটি স্তর পর্যালোচনা করা হয়েছে।

* সর্বোচ্চ স্তর ‘নিরাপদভাবে ব্যবস্থাপিত’, অর্থাৎ পানীয় জল ঘরে সহজলভ্য, প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় এবং মল বা ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত।

* এর নিচে রয়েছে চারটি স্তর : মৌলিক (৩০ মিনিটের কম সময়ে উন্নত উৎস থেকে আনা পানি), সীমিত (উন্নত হলেও ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগে), অনিরাপদ (যেমন সুরক্ষাহীন কূপ বা ঝরনা) এবং প্রাকৃতিক উৎসের পানি।

প্রাকৃতিক উৎসের পানি পান কমছে : ২০১৫ সাল থেকে ৯৬১ মিলিয়ন মানুষ নিরাপদভাবে পরিচালিত পানীয় জলের আওতায় এসেছে এবং কাভারেজ ৬৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

গত বছর যেসব ২.১ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তাদের মধ্যে ১০ কোটি ৬ লাখ মানুষ এখনও প্রাকৃতিক উৎসের পানি ব্যবহার করছে—যা গত দশকে ৬ কোটি ১০ লাখ কমেছে।

২০১৫ সালে ১৪২টি দেশ প্রাকৃতিক উৎসের পানি ব্যবহার বন্ধ করেছে যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৪ টিতে।
২০২৪ সালে ৮৯টি দেশে অন্তত মৌলিক স্তরে সর্বজনীন পানীয় জলের সুবিধা ছিল, যার মধ্যে ৩১টি দেশে নিরাপদভাবে পরিচালিত পানীয় জলের সুবিধা সর্বজনীন। তবে যে ২৮টি দেশে প্রতি ৪ জনে ১ জনের বেশি এখনও মৌলিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত, সেগুলো মূলত আফ্রিকায় অবস্থিত।

 লক্ষ্য ক্রমশ নাগালের বাইরে: স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে, ২০১৫ সাল থেকে ১.২ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদভাবে পরিচালিত স্যানিটেশন সুবিধা পেয়েছে এবং কাভারেজ ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

এগুলোকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এমন উন্নত সুবিধা হিসেবে যা একাধিক পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করা হয় না এবং যেখানে মলমূত্র নিরাপদে স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করা হয় বা বাইরে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

খোলা স্থানে মলত্যাগকারীর সংখ্যা ২০১৫ সালের পর থেকে ৪২ কোটি ৯০ লাখ কমে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি ৪০ লাখে, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার চার শতাংশ।

২০১৫ সাল থেকে ১.৬ বিলিয়ন মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি সেবার আওতায় এসেছে—অর্থাৎ বাসায় সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা—এবং কাভারেজ ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

ইউনিসেফের ওয়াশ পরিচালক সিসেলিয়া শার্প সতর্ক করে বলেছেন, “যখন শিশুদের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধির সুযোগ থাকে না, তখন তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ে।”

তিনি আরও বলেন, এ বৈষম্য বিশেষ করে মেয়েদের জন্য ভয়াবহ, কারণ তাদেরই প্রায়শই পানি সংগ্রহের দায়িত্ব নিতে হয় এবং মাসিকের সময় তারা অতিরিক্ত বাধার মুখে পড়ে। বর্তমান অগ্রগতির হারে প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি আরও দূরে সরে যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ডাকসু নির্বাচনে থাকছে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’সহ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা 
সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ১
গাইবান্ধায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারা বিতরণ 
অস্ট্রেলিয়ায় ইরানের রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের পর তেহরানের পাল্টা পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি 
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্কের টিকা নেই
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে স্বর্ণের বারসহ ২ চোরাকারবারি আটক
জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন রাব্বি
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় ট্রাইব্যুনালে ২৯ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ
বাংলাদেশ কারাগারের পরিবর্তিত নাম ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’
জিয়া পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলেন শেকৃবি ভিসি আবদুল লতিফ
১০