
ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বৈশ্বিক বন্যপ্রাণী সুরক্ষা সম্মেলন আজ (সোমবার) শুরু হয়েছে। আলোচনায় রয়েছে হাঙর সুরক্ষা জোরদার, সীমিত আকারে গণ্ডারের শিং বিক্রি অনুমোদন এবং ইল মাছের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের মত সংবেদনশীল বিষয়।
ব্যাংকক থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
উজবেকিস্তানের সামারকন্দে আয়োজিত এ সম্মেলনে বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি দেশ এবং সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞগণ অংশ নিচ্ছেন। আলোচনা হবে বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য ও সুরক্ষা সংক্রান্ত নানা ধরণের প্রস্তাব নিয়ে।
বৈঠকের মূল ভিত্তি হল সাইটস। এটি বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে গঠিত প্রায় অর্ধ শতাব্দির পুরনো বৈশ্বিক চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৬ হাজার প্রজাতির বাণিজ্য নিয়মের মধ্যে আনা হয়েছে। বিপন্ন প্রজাতি রক্ষায় সাইটস এখন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হিসেবে বিবেচিত।
সম্মেলনে আলোচনার টেবিলে থাকা প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে হাঙরের বিপন্ন কয়েকটি প্রজাতির সুরক্ষায় আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, জিরাফ সম্পর্কিত বাণিজ্যের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা এবং সীমিত আকারে গণ্ডারের শিং ও হাতির দাঁত বিক্রির পথ উন্মুক্ত করার উদ্যোগ।
তবে সবচেয়ে বিরোধিতার মুখে পড়েছে ইল মাছের সুরক্ষা জোরদারের আহব্বান। কারণ, এশিয়ার কিছু অঞ্চলে জনপ্রিয় খাবার হওয়ায় বিষয়টি বিশেষভোবে আলোচনায় এসেছে।
সাইটস বিভিন্ন অ্যাপেনডিক্সের মাধ্যমে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যাপেনডিক্স-১ এর তালিকাভুক্ত প্রজাতিগুলোর বাণিজ্য প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। অ্যাপেনডিক্স-২-এ প্রজাতির বাণিজ্যে বাড়তি যাচাইবাছাই ও সনদ প্রয়োজন।
ইউরোপিয়ান ইল বা অ্যাঙ্গুইলা অ্যাঙ্গুইলা সঙ্কটাপন্ন প্রাণী হিসেবে ২০০৯ সালে অ্যাপেনডিক্স-২ এ যুক্ত হয়। এখন কয়েকটি দেশ আরও কিছু ইল প্রজাতিকে একই তালিকায় যুক্ত করতে চায়।
সমর্থকদের দাবি, কম বয়সী সব ইলই প্রায় একই রকম। সে সময়েই এই মাছের বেশি বাণিজ্য হয়। ফলে বিপন্ন ইউরোপিয়ান ইলকে অন্য প্রজাতি হিসেবে দেখিয়ে বেচাকেনা করা হচ্ছে।
তবে জাপান এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছে। দেশটি ইলের বড় ভোক্তা এবং প্রস্তাবটির অনুমোদন আটকে দিতে তারা ইতোমধ্যেই ব্যাপক লবিং শুরু করেছে।
১০০ পৃষ্ঠারও বেশি রিপোর্টে জাপান জানিয়েছে, সব ইল প্রজাতিকে সাইটস-এর তালিকায় নিলে ‘এই চুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হবে।’ তারা সতর্ক করেছেন, এতে ইলের দাম বাড়তে পারে এবং ‘অবৈধ শিকার ও চোরাচালান আরও বেড়ে যেতে পারে।’
‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতি:
আরেকটি বিতর্কিত প্রস্তাব হলো, সরকার যে হাতির দাঁত ও গণ্ডারের শিং মজুত করেছে তা বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া।
প্রস্তাবের সমর্থকদের মতে, এসব বিক্রি করে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে তহবিল জোগাড় করা সম্ভব। কিন্তু প্রাণী সুরক্ষা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এগুলোর জন্য বৈধ বাণিজ্য প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করে দিলে অবৈধ বাজারও সক্রিয় হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ারের নীতিপরিচালক ম্যাট কলিস বলেন, ‘একবার বৈধ বাণিজ্যের দরজা খুললেই অবৈধ হাতির দাঁত ও গণ্ডারের শিং এশিয়ার বাজারে ঢোকার পথ তৈরি হবে। ওই অঞ্চলে ইতোমধ্যে এটি বড় সমস্যা তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, সাইটস এর আগে দু’বার এই পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। শেষবারেরটি ব্যাপক বিপর্যয়কর ছিল; আমরা আবার সেই ভুলে করতে চাই না।
অন্যদিকে প্রস্তাবের পক্ষে থাকা নামিবিয়ার দাবি, তহবিল ছাড়া রাইনোর আবাস ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং জনসংখ্যাও ঝুঁকিতে পড়ছে। ২০২২ সালেও এই প্রস্তাবটি একবার বাতিল হয়েছিল।
সম্মেলনে সাতটি হাঙর প্রজাতির সুরক্ষা বাড়ানোর বিষয়ও আলোচনা হবে। এর মধ্যে মারাত্মকভাবে বিপন্ন ওসিয়ানিক হোয়াইটটিপ হাঙরকে অ্যাপেনডিক্স-১ এ তুলে বাণিজ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ বিষয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পাওয়া সম্ভব।
তবে হোয়েল শার্ক এবং লিভার অয়েলের জন্য শিকার হওয়া গালপার শার্কের বাণিজ্য সীমিত করার প্রস্তাব কিছুটা কড়া পর্যালোচনার মুখে পড়ার শংকা রয়েছে।
২০২২ সালের সম্মেলনে ডজনখানেক হাঙর প্রজাতিকে অ্যাপেনডিক্স-২ সুরক্ষায় আনা হয়েছিল। তখনও জাপানসহ কয়েকটি দেশ এর বিরোধিতা করেছিল।
সামারকন্দে শুরু হওয়া এ সম্মেলন আগামী ৫ ডিসেম্বর শেষ হবে।