বিধিমালা জারি : বিচারিক পদ সৃষ্টির ক্ষমতা এখন সুপ্রিম কোর্টের

বাসস
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৩:৩০

ঢাকা, ৩০ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জুডিশিয়াল সার্ভিসে পদ সৃষ্টিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিটির হাতে ন্যস্ত করে বিধিমালা জারি করা হয়েছে।

কমিটিতে জনপ্রশাসন, অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রতিনিধি রাখতে হবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের সই করা প্রজ্ঞাপনে গত সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা-২০২৫ নামে জারি করা এই বিধিমালায় জুডিসিয়াল সার্ভিসের বিচারিক ও প্রশাসনিক পদগুলোকে ‘ক্যাডার’ পদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাশাপাশি সার্ভিসের পদগুলোকে রাজস্ব খাতে স্থায়ীভাবে সৃজনেরও বিধান করা হয়েছে।

আগে যে কোনো বিচারকি পদ সৃজন হতো প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য। পরে তা ধীরে ধীরে জনপ্রশাসনসহ অন্যদের অনুমোদনের ভিত্তিতে স্থায়ী হতো। কিন্তু এখন বিচারকদের যে কোনো পদ সৃজন হবে স্থায়ীভাবে। ফলে বিচারকদের পদ সৃজনের জন্য এখন থেকে বিচার বিভাগকে আর প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে হবে না।

এ ছাড়া সংবিধানের ১১৫ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বিষয়ে পৃথক বিধিমালা তৈরির ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে। 

মাসদার হোসেন মামলার রায় ও সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা-২০২৫ জারি করা হয়েছে।

বিধিমালার ৫ বিধিতে এই সার্ভিসের পদ সৃজন বিষয়ে বলা হয়েছে। ৫(১) উপবিধি অনুসারে, বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের কর্মে জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন, হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারপতি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিবদের সমন্বয়ে বিচারিক পদ সৃজন কমিটি গঠিত হবে।

ওই পদ সৃজনের ক্ষেত্রে কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। ৫(২) উপবিধিতে বলা হয়েছে, সার্ভিসের পদ সৃজনের ক্ষেত্রে বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে বিচারিক পদ সৃজন কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে আইন ও বিচার বিভাগ রাষ্ট্রপতির কাছে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করবে এবং অনুমোদিত সারসংক্ষেপ অনুযায়ী চূড়ান্ত আদেশ জারি করবে।

এর আগে, বিচার বিভাগের পদ সৃজনের জন্য প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হতো। জনপ্রশাসনের অনুমোদনের পর তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তা সচিব কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। সচিব কমিটির অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে এটি চূড়ান্ত হতো। আর এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে মাসের পর মাস এমনকি বছর পেরিয়ে যেত। ফলে বিচারক শূন্যতায় বিচার কাজ ব্যাহত হতো। 

এ ছাড়া প্রশাসনের হাতে পদ সৃজনের ক্ষমতা থাকায় কোনো আদালতের জন্য পদ সৃজনের প্রয়োজন, কতটি পদ সৃজনের প্রয়োজন তা নির্ধারণ কঠিন ছিল। 

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিটির হাতে এই ক্ষমতা আসায় এসব সমস্যা দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিধিমালার ৩ ধারায় জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠনের ব্যাপারে বলা হয়েছে। 

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সংবিধানের স্বীকৃতমতে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস নামে একটি স্বতন্ত্র সার্ভিস গঠন করা হবে। ৩ ধারার (৩) উপধারায় বলা হয়েছে, এই সার্ভিস নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণের সমন্বয়ে গঠিত হবে, যথা—(ক) বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ এবং সাময়িক বরখাস্তকরণ, বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৭-এর অধীন গঠিত বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ; এবং (খ) যারা সার্ভিসে নিযুক্ত হবেন। বিধিমালার ৪ ধারায় সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত পদগুলোর ব্যাপারে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তপশিলে উল্লিখিত পদ হবে সার্ভিসে ক্যাডারের পদ। (২) সার্ভিসের পদগুলো রাজস্ব খাতে স্থায়ীভাবে সৃজন করা হবে। বিধিমালার সঙ্গে যুক্ত করা তপশিলে জুডিসিয়াল সার্ভিসে বর্তমানে কর্মরত ১৮১৯টি বিচারিক পদ এবং ১২০টি প্রশাসনিক পদ রয়েছে। বিধিমালায় এগুলোকে ক্যাডার পদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যরা বিসিএস ক্যাডারভুক্ত ছিলেন। 

২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথককরণের পর তৈরি করা জুডিসিয়াল সার্ভিস বিধিমালায় ক্যাডার শব্দ বাদ পড়ে যায়। শুধু জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্য উল্লেখ থাকায় বিচারকরা বিদেশে স্কলারশিপ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। 

এ ছাড়া আগে বিচারকদের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে প্রেষণে নিয়োগ করা হতো। কিন্তু প্রশাসনিক পদগুলো এখন বিচার বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট পদ হিসেবে বিধিমালায় উল্লেখ করায় বিচারকদের আর প্রেষণে নিয়োগ করতে হবে না বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে কমিটি গঠন বিধিমালাটির অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি দিক। অধস্তন আদালতের বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক যে জটিলতা ছিল, তা এই বিধিমালার মাধ্যমে দূর হবে বলে মনে করি। জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা ২০২৫ বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
চাঁদপুরে মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট পাওয়ায় হাসপাতাল মালিকের জরিমানা
জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে সুনামগঞ্জে গ্রাফিতি প্রদর্শনী
মাদারীপুরে শিক্ষার্থীদের উপর বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণ করে পুলিশ ও ছাত্রলীগ
ঝিনাইদহে চোরাই মোবাইল ও টাকা উদ্ধার
কেরানীগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের আগানগরে উন্মুক্ত ওয়ার্ড সভায় শুনানি অনুষ্ঠিত
নাটোরে শিশু শহীদদের স্মরণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা
মাঠ পর্যায়ে ভূমি কর্মকর্তাদের পদবী পরিবর্তনের উদ্যোগ
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় : বগা ফেরিঘাটের ইজারা বাতিল করলো সওজ
সিলেট সীমান্তে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
পঞ্চগড় সীমান্তে ১৭ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ
১০