বাসস
  ১২ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪১
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪৩

জাতির পিতার সমাধিতে মানুষের অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধা: শোকাচ্ছন্ন টুঙ্গিপাড়া

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১২ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস) : আগস্ট মাস বাঙালী জাতির শোকের মাস। এ মাসেই বাঙালী জাতি হারিয়েছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর বিয়োগাত্মক এ মাসে তাঁর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়া  শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে । টুঙ্গিপাড়ার সর্বত্র উড়ছে কালো পতাকা । সর্বস্তরের মানুষ শোকের চিহৃ কালো ব্যাজ বুকে ধারণ করেছেন।  
বেদনার অশ্রু মিশ্রিত শোকের মাসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শোকার্ত মানুষের কাফেলা দীর্ঘ হচ্ছে। জাতীয় শোক দিবস যতই এগিয়ে আসছে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শোকার্ত মানুষের সমাগম ততই বড়ছে। বিশেষ করে ছুটির দিল গুলোতে বুকে শোকের চিহৃ কালো ব্যাজ করে হাজার হাজার মানুষ আসছেন টুঙ্গিপাড়ায়। তারা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে তাঁর স্মৃতির প্রতি শোকাবহ আগস্টের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু ও ৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালরাতে শাহাদাত বারণকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্য শোকাশ্রুপাত করছেন। শোককে শক্তিতে পরিণত করে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সুখী, সমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিচ্ছেন।
এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিনই  পদ্মা সেতুর ব্যবহার করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ থেকে বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা টুঙ্গিপাড়া আসছেন। এছাড়া রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার মানুষ টুঙ্গিপাড়া এসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শোকাবহ আগস্টের অশ্রুসজল শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। দোয়া-মেনাজাতে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্য কাঁদছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা নওয়াব আলী বলেন, শোকের মাসের প্রথম দিন থেকেই মন্ত্রী, এমপি, সচিব, পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, পেশাজীবী, শ্রমজীবী সংগঠন, দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন  ব্যক্তিবর্গ টুঙ্গিপাড়া আসছেন। প্রতিদিন অসংখ্য সংগঠন এখানে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। ফুলে ফুলে ছেয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদী ।  এ বছর শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে মানুষের সমাগম বেশি লক্ষ্যকরা যাচ্ছে। শোকার্ত মানুষের অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধায় এখানে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে।
টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল বলেন, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।  তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান। মাতার নাম শেখ সায়েরা খাতুন। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের প্রিয় খোকা। ছোট বেলা থেকেই তিনি শোষিত নির্যাতিত মানুষের জন্য কাজ শুরু করেন। তিনি নিজেকে নিয়ে কখনও চিন্তা করেননি। মানুষের অধিকার আদায়ে সারাজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। এজন্য তাকে জেল, জুলুম, হুলিয়া ও শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আপসহীন খোকা সবার প্রিয় মুজিব ভাই থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন। তারপর বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়েছেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকরা তাকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিথর দেহ নিয়ে মৃত্যুহীন বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন টুঙ্গিপাড়ার প্রিয় মাটিতে। এখানেই পিতা-মাতার কবরের পাশে তিনি শায়িত আছেন। মৃত্যুর ৪৮ বছর পর প্রমাণিত হয়েছে  জীবিত বঙ্গবন্ধুর থেকে মৃত বঙ্গবন্ধু বাঙালীর হৃদয় দখল করতে সচেষ্ট হয়েছেন । তাই শোকাবহ আগস্টে তাঁর সমাধিসৌধ শোকার্ত অগনিত মানুষের অশ্রুপাতে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাবুল শেখ বলেন, ঘাতকা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে  হত্যা করে দুর্গম ও পশ্চাদপদ টুঙ্গিপাড়া গ্রামে কবর দিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহৃ মুছে দিতে চেয়েছিল। ঘাতকদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরকে ঘিরে সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছেন। এ সমাধিসৌধ প্রত্যন্ত টুঙ্গিপাড়া গ্রামকে নবালোকে উদ্ভাসিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর মহিমায় টুঙ্গিপাড়া জেগে উঠেছে। বাঙালী জাতির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে টুঙ্গিপাড়া। তাই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তাঁর জন্য কাঁদেন। তাদের শোকাশ্রুতে টুঙ্গিপাড়ায় এখন শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে।  
টাঙ্গাইলের করটিয়া উপজেলা সদরের কলেজের শিক্ষার্থী  মঈনুল আহসান (২১) বলেন, শোকের মাসে এ প্রথম আমি টুঙ্গিপাড়া এসেছি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। তার জন্য দোয়া মোনাজাত করেছি। এখানে এসে ৭৫ এর ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনা জানতে পেরেছি। ওই দিন বঙ্গবন্ধুর সাথে শিশু ও মহিলাদের হত্যা করা হয়। এটি বিশ্বের ইতিহাসের  একটি কলংক জনক অধ্যয়। বিশ্বের কোথাও এইভাবে একসাথে রাষ্ট্রনায়কসহ শিশু ও মহিলাদের হত্যা করা হয়নি। কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনাকেও ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড হার মানিয়েছে। এই হত্যাকান্ড আমার বিবেককে নাড়া দিয়েছে। আমি এই হত্যাকান্ডের নিন্দা জ্ঞাপন করছি।  শোকের মাসে ৭৫ এর ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় ভিডিও/স্থির চিত্র ও ধারা বর্নণার ব্যবস্থা রাখলে ভালো হয়। এতে আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের মানুষ ১৫ আগস্ট সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারবে। দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর  আত্মত্যাগ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগ আমাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করছে ।
রাজশাহীর বাঘমারার আওয়ামী লীগ কর্মী মজনু শেখ (৫৫) বলেন,  বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ ছুঁয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করে¡ বঙ্গবন্ধুর সুখী, সমৃদ্ধ আধুনিক সোনারবাংলা গড়ার শপথ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার নেতৃতে আমরা দ্রুত অভিষ্ট লক্ষ্যে ইনশাল্লাহ পৌঁছাতে পারব।