বাসস
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৫২

আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নেয় জঙ্গিরা : খন্দকার আল মঈন

ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক (মুখপাত্র) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামকে সক্রিয় করতে জঙ্গিরা আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল ।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তারা পুনরায় সংগঠনকে সক্রিয় করতে পার্শ্ববর্তী দেশ ও আফগানিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর দেশে এসে নতুন কর্মী সংগ্রহসহ সংগঠনের তৎপরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছিল।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র এসব তথ্য জানান।
র‌্যাব জানিয়েছে, রোববার রাতে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ এর একটি দল নারায়নগঞ্জ জেলার  রূপগঞ্জ (পূর্বাচল) এলাকায় অভিযান চালিয়ে "আনসার আল ইসলাম' এর সমন্বয়কারী ও প্রশিক্ষণ শাখার প্রধান আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবাসহ ৬ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা (৪১) ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানার বাসিন্দা আব্দুর রহিমের পুত্র।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে ময়মনসিংহ জেলার জেলার ভালুকা থানার মো. হান্নানের পুত্র মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে মুরাদ (৩১), তারাকান্দা থানার হাফেজ মাহমুদুল্ল্যা হেলালের পুত্র আশিকুর রহমান ওরফে উসাইমান (২৭), মুক্তাগাছা থানার মুহাম্মদ আব্দুল হাইয়ের পুত্র  মুহাম্মদ জাকারিয়া ওরফে আবরার (২৪),  টাঙ্গাইল জেলা ধনবাড়ি থানার মো. এমদাদুল হকের পুত্র মো. আল আমিন  ওরফে রবিন ওরফে সামুরা (২৪) ও কুমিল্লা জেলার কারী ওয়ানী উল্ল্যার পুত্র মো. আবু জর ওরফে মারুফ (১৮)।
এসময় তাদের কাছ থেকে জিহাদী ও উগ্রবাদী বই এবং অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদি পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো। এছাড়া তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য প্রদান করে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতো। বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো বলে জানান।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানান, তারা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতেন এবং তারা সংগঠনের সদস্যদের তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রেরণ করতো বলে স্বীকার করেছেন।
র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক সাইবা দাখিল পাশ। তিনি সংগঠনে যোগদানের পর বিভিন্ন পেশার আড়ালে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে তিনি সংগঠনের রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক এবং প্রশিক্ষণ শাখার প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তার সাথে আনসার আল ইসলাম এর বর্তমান আমিরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত আশিকুর রহমান একজন হাফেজ। তিনি ময়মনসিংহ এলাকায় হিজামার ব্যবসা করতেন বলে জানা যায়। তিনি সংগঠনের ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার অন্যতম প্রধান সেকশন চীফ হিসেবে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পাশাপাশি তিনি সংগঠনের জিহাদী প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়ে অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন ।
তিনি আরও জানান, জাকারিয়া ওরফে আবরার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা হতে হাফেজী পড়া সম্পন্ন করেন। তিনি রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার এবং মানিকগঞ্জ জেলার সংগঠনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। সাইবা এর নির্দেশে সংগঠনের সদস্যদের সাভার ও গাজীপুর, টঙ্গীর বিভিন্ন আনসার হাউজে শারীরিক (কারাতে) প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন তিনি। এছাড়াও তিনি নতুন সদস্য সংগগ্রহসহ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গোপনীয় এ্যাপস এর মাধমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন।
র‌্যাব সূত্র জানান, গ্রেফতারকৃত মো. আল আমিন ওরফে রবিন ওরফে সামুরা মাদ্রাসায় শিক্ষকতার আড়ালে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অর্থ শাখার প্রধান গ্রেফতারকৃত মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিব এর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।  তিনি মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিব এর নির্দেশে কেএনএফ এর প্রশাসন ও অর্থ শাখার পাসেন মিরাম নামক ব্যক্তির কাছে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র ক্রয়ের জন্য অর্থ প্রেরণ করতেন বলে জানা যায়। তার সাথে কুকি চীন এর নেতৃস্থানীয়দের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।