শিরোনাম
ঢাকা, ১২ মে, ২০২৪ (বাসস) : চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে কিডনি বিক্রি দালাল চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি মডেল থানা।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মো. রাজু হাওলাদার, শাহেদ উদ্দীন ও আতাহার হোসেন বাপ্পী। শনিবার ধানমন্ডির ২/এ রোডে অভিযান চালিয়ে রাজু হাওলাদার ও শাহেদকে গ্রেফতার করা হয়। আতাহার হোসেনকে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
তিনি জানান, এই চক্রের খপ্পরে পড়ে কিডনি হারানো ভুক্তভোগী মো. রবিন খানের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ধানমন্ডি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসে মিরপুর-১০ নং শাহ আলী মার্কেটের পিছনে রবিন তার এক বন্ধুর সাথে চায়ের দোকানে বসে সংসারের অভাব অনটন নিয়ে কথা বলছিল। পাশে বসা মাছুম এসব কথা শুনে রবিনকে বলে যে, ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং চাকরি দিতে পারবে। রবিনের সাথে মাছুমের ১৫/২০ দিন মোবাইল ফোনে কথা হয়। মাছুম ভারত নিয়ে যাওয়া এবং সকল কার্যক্রম করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে রবিন রাজি হয়। রবিনকে পাসপোর্ট তৈরি করতে সহায়তা করে মাছুম। সে ভারতে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হবে বলে ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রবিনকে ধানমন্ডিতে একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে এই চক্রের আরেক সদস্য অভিযুক্ত মো. রাজু হাওলাদারের সাথে রবিনের পরিচয় হয়। অভিযুক্তরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহ করে ভারতের ভিসা করানোর জন্য ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট রেখে দেয়।
তিনি জানান, এরপর ভিসার কার্যক্রম শেষ করে মাছুম ও মো. রাজু হাওলাদার রবিনের সাথে অপর দুই অভিযুক্ত শাহেদ উদ্দিন ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা জানায়, শাহেদ ও আতাহার ব্যবসায়িক পার্টনার। তাদের দেয়া বিমানের টিকেট নিয়ে রবিন ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের নয়া দিল্লিতে যায়। সেখানে এই চক্রের অপর দুই সদস্য অভিযুক্ত শাহীন ও সাগর ওরফে মোস্তফা বিমানবন্দর থেকে রবিনের পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। তারা রবিনকে ভারতের ফরিদাবাদ এলাকায় নিয়ে একটি বাসায় ২০/২৫ দিন আটকে রাখে। কিছুদিন পর মাছুম বাংলাদেশ থেকে সেখানে যায়। মাছুমকে পেয়ে ভুক্তভোগী তার চাকরির কথা জিজ্ঞাসা করলে সে তালবাহানা শুরু করে। মাছুম রবিনকে তার অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি প্রদানের জন্য প্ররোচিত করে। পাসপোর্ট ছাড়া সে দেশে ফিরে আসতে পারবে না বলেও ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা তাকে নয়া দিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করায়। কিছুদিন পর ভারতের গুজরাটে নিয়ে মুক্তিনগর এলাকায় একটি বাসায় আটকে রাখে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, অভিযুক্তরা রবিনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০২৪ সালের ৪ মার্চ কৌশলে গুজরাটের একটি হাসপাতালে একটি কিডনি প্রদানে বাধ্য করে এবং কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। অপারেশন শেষে ওই হাসপাতাল থেকে ৪ দিন পরে ছাড়পত্র প্রদান করে। এরপর চক্রটি ভারতের অজ্ঞাত স্থানে ১০/১১ দিন রবিনকে আটক রাখে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রবিন জানতে পারে, অভিযুক্তরা দালাল চক্রের কাছে প্রায় ৫০ লাখ টাকায় কিডনি বিক্রি করেছে।
তিনি জানান, ভারতে অভিযুক্তরা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তারা তাকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলে। বাংলাদেশে অবস্থানরত চক্রের অন্য সদস্যরা ভুক্তভোগীর স্ত্রীর বিকাশ নম্বরে বিভিন্ন সময় মোট তিন লাখ টাকা প্রদান করে। আরও তিন লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেয়।
তিনি আরো জানান, কিডনি হারিয়ে আজ সে একজন কর্মক্ষমতাহীন মানুষ। এই চক্রের মাধ্যমে আরেকজন প্রতারিত হওয়ার কথা রবিন জানতে পেরে ধানমন্ডি মডেল থানা পুলিশকে জানিয়েছে। পুলিশ তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে।