বাসস
  ২৯ মে ২০২৪, ১৪:৪০

ঘূর্ণিঝড় রেমালে গোপালগঞ্জে সহস্রাধিক মাছ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৯ মে, ২০২৪ (বাসস): গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা  কোটালীপাড়াও টুঙ্গিপাড়ায়  ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে  প্রায়  সহস্রাধিক মাছ চাষি  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তাড়াইল গ্রামের দীনবন্ধু গাইন। সংসারে রয়েছে স্ত্রী ও ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। ছেলে অনার্স পড়ছে আর মেয়ে এবার এইচএসসি পাস করেছে। সংসারের আর্থিক অটন কাটাতে এ বছর ঋণ করে ৩০ বিঘা ঘেরে মাছের চাষ করেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে ঘের ভেসে যাওয়ায় এখন সর্বস্বান্ত তিনি। ঋণ কিভাবে শোধ করবেন সেই চিন্তায় তিনি এখন দিশেহারা।
দীনবন্ধু গাইন বলেন, সংসারের অভাব অনটন কাটাতে এ বছর ৩০ বিঘা ঘেরে মাছের চাষ করি। ভেবেছিলাম  মাছ অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। লাভ হবে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো। কিন্তু মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় এ স্বপ্ন এখন শেষ। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কিভাবে সংসার চলবে সেই চিন্তায় দিশেহারা । সরকারি সহযোগিতা না পেলে মরন ছাড়া আমার আর কোন গতি থাকবে না। শুধু দীনবন্ধু নয় তার মত একই অবস্থা টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জসদর উপজেলার অন্তত সহস্রাধিক মাছ চাষির।
গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজন কুমার নন্দী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অতিরিক্ত জোয়াড় ও বৃষ্টিপাতে  গোপালগঞ্জ জেলার সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার মাছের ১ হাজার ৫শ’১০টি ঘের ভেসে গেছে । ভেসে যাওয়া  ঘেরের মোট আয়তন ৬০৩ হেক্টর। এখান থেকে ৬’শ ৬৬ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে ৫শ’৯৭ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছ, চিংড়ি ৬৮ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন, পোনা ২৯ লাখ পিস ও চিংড়ি পিএল ৬ দশকিম ৩১ লাখ পিস । এতে জেলার সহস্রাধিক চাষির অন্তত ১৭ কোটি ১৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের তালিকা তৈরী করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের সহায়তা করার জন্য  সেখানে  সুপারিশ করা হয়েছে। সরকার কোন বরাদ্দ  দিলে তা চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।  
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তারাইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাছের ঘের পাড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন দীনবন্ধু। এক পলক দৃষ্টিতে ঘেরের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তারাইল গ্রামের শতাধিক মৎস্য  চাষিদের ঘের তলিয়ে যায়। এতে ভেসে যায় কার্প, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। অনেকেই ঘেরে নেট দিয়ে বাঁধ দিয়েও মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি। আর কয়েকদিন বাদে এসব মাছ বিক্রির জন্য ঘের থেকে উঠানো হতো। কিন্তু সবকিছুই শেষ করে দিল ঘূর্ণিঝড় রেমাল।
তাড়ালই গ্রামের ভবসিন্ধু গাইন বলেন, আমার সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সংসারের অভাব কাটাতে ১৭ বিঘা ঘেরে কার্প, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করি। মাছের যে সাইজ হয়েছে তা ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। এতে আমার অন্তত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমাল আমার সব কেড়ে নিয়েছে। মাছ হারিয়ে এখন চোখে- শস্যে ফুল দেখছি।
অরবিন্দু গাইন ও অর্চনা গাইন দম্পত্তি বলেন, পরিবারের অভাব অনটন মোচন করতে মাছ চাষ করেছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রেমালের তা-বে মাছের ঘের ভেসে গেছে । এখন আমার ঘেরে দশ হাজার টাকার মাছও নেই । সরকার যদি এখন আমাদের দিকে না তাকায়, তাহলে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর কোন রাস্তা নেই ।
অপর মাছ চাষি অমৃত গাইন ও খোকন গাইন বলেন, নিজেদের জমানো টাকা ধার দেনা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে লাভের আশায় মাছ চাষ করেছিলাম। ঘূর্ণিঝড়ের তা-ব লাভের স্বপ্ন চুড়মার করে দিয়েছে । অনুদান দিয়ে আমাদেরকে আবার মাছ চাষের সুযোগ করে দেওয়া জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আমাদের পথে বসতে হবে।