বাসস
  ০৭ জুন ২০২৪, ১১:১০

মেহেরপুরে ঈদের আগেই ১৬০টি ভূমিহীন পরিবারে ঈদ আনন্দ

মেহেরপুর, ৭ জুন, ২০২৪ (বাসস): ঈদের আগেই ১৬০টি পরিবার নতুন ঘরে উঠবে। এসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ শতাধিক। ইতোমধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়া ঘরে অনেক পরিবারই উঠে পড়েছে। ১০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে সবাই উঠবে নতুন ঘরে। তাইতো ঈদের আগেই এই ভূমিহীন পরিবাগেুলোতে এসেছে ঈদ আনন্দ।
১৯৯৯ সালে জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে রঘুনাথপুর মাঠের খাস জমির উপর গড়ে তোলা হয় রঘুনাথপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প। টিনশেড দিয়ে নির্মিত এক একটি ব্যারাকে বাস করতো ১০টি পরিবার। আর প্রতিটি পরিবারকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল একটি করে কক্ষ।  দীর্ঘদিন মেরামত না করায় সেসব ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে।  অযোগ্য ঘরেই বসবাস করতো তারা। এবার ওইসব পরিবারগুলোর জন্য দুটি কক্ষ, একটি বাথরুম, বারান্দা ও লাল-সবুজ রঙের টিনের ছাউনি দিয়ে নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। নতুন করে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে এসব ঘর। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ টাকা করে। পাকা রাস্তা, পানি, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও আছে।  
আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর পাবার আগেই নবনির্মিত বাড়িতে উঠেছেন আশ্রায়ণের মনোয়ারা খাতুন। তিনি বলেন, আমাদের কোনো জমি-জিরেত নাই। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এখানে ২৫ বছর বসবাস করছ্ িএবার নতুন  করে সেমিপাকা বাড়ি করে দেয়া হচ্ছে।  
আশ্রায়ণের সুবিধাভোগী জবেদা খাতুন বলেন, ঝড় ঝান্ডা নিয়ে এখানে  বসবাস করতাম। জীবনের পড়ন্ত বেলায় পাকাবাড়ি পাচ্ছি এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। এবার আমরা পাচ্ছি ঈদ উপহার।   
উদ্বোধনের আগে ভাগেই আশ্রায়ণের নতুন ঘরে উঠে পড়েছে সুরেলা নামের পঞ্চাষোর্ধ নারী। তিনি খেজুর পাতা দিয়ে পাটি বুনছিলেন। তিনি পানখাওয়া মুখে চওড়া হাসি দিয়ে জানালেন-  এতদিন রোদ বৃষ্টির মধ্যে ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করছিলাম। এবার স্বপ্নের নতুন ঘরে বসবাস করবো তা কত আনন্দের বলে বোঝাতে পারবোনা।  
আশ্রায়লের সবাই শ্রমজীবী। ফাঁকা মাঠের মধ্যে গড়ে ওঠা এই আশ্রায়ণের সবাই ভূমিহীন। এসব ভূমিহীন শ্রমজীবীদের   শ্রম বিকানোর পথ ৫ কিলোমিটার দুরের আমঝুপি ইউনিয়ন বাজারে কিম্বা ইনিয়নের মাঠে ঘাটে। গ্রামে স্কুলগমন যোগী শিশুর সংখ্যা শতাধিক। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। দু’জন শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তারা চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ায় স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। অতি আগ্রহী কয়েকটি শিশু দুই কিলোমিটার দূরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে যায়। আশ্রায়ণের স্কুলটিতে এখন বাসিন্দারা খড়কুটোসহ গৃহপালিত পশু বেঁধে রাখে।  
মেহেরপুর সদরের প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার নাহিদা আক্তার জানান- স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার নিশ্চয়তা দিয়েও আশ্রায়ণের অনেককে বলা হয়েছে।  কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনা। তবে এখানে একটি নতুনভাবে স্কুল নির্মাণ করা হবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী নাজিব হাসান বলেন, এতদিন রঘুনাথপুর আশ্রায়ণ খুবই জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করত সেখানকার পরিবারগুলো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করা হয়েছে নতুন ঘর। আগামী ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরগুলো উদ্বোধন করবেন। ১৬০টি পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।