ঢাকা, জুলাই ৩০, ২০২৪ (বাসস) : আজ থেকে শুরু হচ্ছে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪’। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘ভরবো মাছে মোদের দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতি বছরের মতো জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪ উদযাপিত হবে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, ২০২৪ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২ জন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক, ২০২৪ প্রদান করা হবে- যার মধ্যে রয়েছে ৬টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জ পদক। প্রধানমন্ত্রী এ দিন বেলা ১২টায় গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। 
আজ মঙ্গলবার সকালে মৎস্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মো. আবদুর রহমান এ সব তথ্য তুলে ধরেন।
মন্ত্রী এ সময় বলেন,  ২০৪১ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লাখ মেট্রিক টন অর্জন করতে খামার যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় মৎস্যচাষ প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রতিটি পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। 
মন্ত্রী বলেন, নদী-নালা, খাল-বিলে পোনা অবমুক্তকরণ, মৎস্য হ্যাচারি আধুনিকায়ন, খাঁচায় মাছ চাষ প্রযুক্তি ও অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়ানো হবে। 
সম্প্রতি বাংলাদেশ চীনকে টপকিয়ে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে মাছ উৎপাদনে আমরা প্রথম হতে চাই। সামুদ্রিক মাছের অবস্থান, গতিবিধি, মজুদ নিরূপণ ও আহরণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার আধুনিক ট্রলার আনার ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তা পাওয়া গেলে তাকে স্বাগত জানানো হবে।
সরকার মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, প্রকৃত জেলেদের শনাক্ত করে তাদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত নিবন্ধিত প্রায় ১৮ লাখ ১০ হাজার জেলের মধ্যে ১৫ লাখ ৮০ হাজার জেলেকে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে। 
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও অধিক দেশে বাংলাদেশ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে। বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৭ হাজার ৪শ ৮ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার ৪শ ৯৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এ সময় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, ২০২৪ উপলক্ষ্যে নেয়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচি এবং দেশের সব জেলা-উপজেলায় স্থানীয়ভাবে ৭ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির উল্লেখ করেন। 
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ঢাকায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। 
এ দিন বেলা ১২টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। 
তৃতীয় দিন ১ আগস্ট সকাল ১০টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনস্থ পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। 
সপ্তাহের চতুর্থ দিন বিএফআরআই একটি সেমিনার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। 
৫ম দিন ৩ আগস্ট জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ ভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। 
৬ষ্ঠ ও ৭ম দিনে যথাক্রমে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণ মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। 
এছাড়াও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, আলোচনা অনুষ্ঠান ও মৎস্য খাতের সাফল্য নিয়ে ভিডিও প্রদর্শন এবং মৎস্য খাতে বর্তমান সরকারের অবদান ও অর্জন নিয়ে স্ক্রল ও টিভিসি প্রচার করা হবে। দেশের সকল জেলা-উপজেলায় সপ্তাহব্যাপী আলোচনা সভা, সেমিনার বা কর্মশালা, র‌্যালি, পোনা অবমুক্তকরণ, স্থানীয় পর্যায়ে সফল মৎস্য চাষি ও উদ্যোক্তাদের পুরস্কার বিতরণ, মৎস্য খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, মৎস্যচাষিদের জন্য বিশেষ পরামর্শ সেবা, পানি পরীক্ষা, রচনা বা কুইজ প্রতিযোগিতা, সুফলভোগীদের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।